রংপুরে তীব্র শীতে তিন শতাধিক শিশু হাসপাতালে

COLD PHOTO 1রংপুরে মাঘের শুরু থেকেই তীব্র শীতে বিপর্যন্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। বেড়েছে নিউমোনিয়া, কোল্ড ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টের মতো রোগ। আর শীতে ছড়িয়ে পড়া রোগে আক্রান্ত হওয়াদেরও বেশিরভাগই শিশু। শুধু তাই নয়, গত তিন দিনে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শীতজনিত রোগে মৃত্যু হয়েছে সাত শিশুর। আর রোগাক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে তিন শতাধিক শিশু।

সরেজমিনে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, প্রচণ্ড শীতের কারণে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টের মতো রোগে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে হাসপাতালে আসছেন অভিবাবকরা। আউটডোরে দীর্ঘ লাইনে তারা অপেক্ষা করছেন চিকিৎসকের সেবার জন্য। রোগাক্রান্ত শিশুদের মধ্যে গুরুতর অসুস্থদের ভর্তি করা হচ্ছে হাসপাতালে। বাকিদের চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া শিশুর সংখ্যাও ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি। ওয়ার্ডে জায়গা না হওয়ায় তাদের অনেককেই থাকতে হচ্ছে হাসপাতালের মেঝেতে।

রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার রামনাথপুর গ্রামের শেফালী বেগম এসেছেন হাসপাতালের আউটডোরের শিশু বিভাগে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার দেড় বছরের মেয়ে মমতাজ সাত দিন ধরে প্রচণ্ড জ্বরে ভুগছে। সঙ্গে ডায়রিয়াও আছে। কিছুতেই তার পাতলা পায়খানা বন্ধ হচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে হাসপাতালে এসেছি।’ চিকিৎসক দেখার পর শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত কুড়িগ্রামের এক বছর বয়সী শিশু অর্নবকে হাসপাতালে এনেছেন তার মা রাহেলা বেগম। হাসপাতালের আউটডোরে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য আরও এসেছে রংপুর নগরীর শালবন এলাকায় লাইলী বেগমের ৬ মাস বয়সী শিশু, লালমনিরহাটের আদিতমারীর সালেহা বেগমের শিশুসহ আরও অনেকে।

হাসপাতালের আউটডোরেরর শিশু বিভাগে দায়িত্বরত মেডিক্যাল অফিসার ডা. স্মৃতি রায় বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রতিদিন গড়ে দেড় থেকে দুইশ শিশু আসছে চিকিৎসা নিতে। এদের বেশিরভাগই নিউমোনিয়া, কোল্ড ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ‍ভুগছে। এসব শিশুর মধ্যে যাদের অবস্থা একটু ভালো তাদের ব্যবস্থাপত্র দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। আর যেসব শিশুর অবস্থা গুরুতর তাদের ওয়ার্ডে ভর্তি করে নেওয়া হচ্ছে।’

এ বছর শীতের তীব্রতা বেশি হওয়ার কারণেই শীতজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বেশি বলেও জানিয়েছেন ডা. স্মৃতি রায়।

COLD PHOTO 2এদিকে, হাসপাতালের ৯ ও ১০ নম্বর শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, এ দুটি ওয়ার্ডে তিলধারণের জায়গা নেই। ওয়ার্ডের সব বেডেই রয়েছে রোগী। পাশাপাশি ওয়ার্ডের মেঝেতেও চিকিৎসা নিচ্ছে অনেক শিশু।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত তিন দিনে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিন শিশু নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। এ সময় মোট সাতটি শিশু মৃত্যুবরণ করেছে।

তবে এসব শিশু অন্য রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে বলে উল্লেখ করে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. অজয় কুমার রায় বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এসব শিশু নিউমোনিয়া বা কোল্ড ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে নয়, অন্য রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।’

বর্তমানে হাসপাতালের দুটি শিশু ওয়ার্ডে তিন শতাধিক শিশু ভর্তি আছে বলে জানান অজয় কুমার রায়।

চলমান তীব্র শীতে কী করণীয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রংপুরে এখন তীব্র শীতের পাশাপাশি রয়েছে শৈত্য প্রবাহ। এখন শিশু আর বৃদ্ধদের প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়ায় ভালো। এ সময় শিশুদের প্রয়োজনীয় গরম কাপড় পরিয়ে রাখতে হবে যেন কোনোভাবেই ঠাণ্ডা না লাগে।’

/টিআর/এমডিপি/