চার বছরেও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি রানা প্লাজায় নিহত ও আহতের পরিবারগুলো

RANA PLAZA_3আজ ২৪ মার্চ রানা প্লাজা ট্রাজেডির ৪ বছর। ২০১৩ সালে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ওই ঘটনার চার বছর পরেও ঘুড়ে দাঁড়াতে পারেননি হতাহত গার্মেন্টম কর্মীর পরিবারগুলো। এছাড়া বেঁচে থাকা অনেবেই শারীরিকভাবে পঙ্গু হয়ে নানা কষ্টে দিনাতিপাত করছেন।

এছাড়া নিখোঁজ অনেকের লাশের সন্ধান না মেলায় স্বজনদের আহাজারি এখনও থামেনি। ঘরে থাকা ফ্রেমে বাঁধা ছবিই এখন স্বজনদের বেঁচে থাকার অবলম্বন। তবে সরকারিভাবে পাওয়া সামান্য অর্থে হতাহত অনেকে গরু, ছাগল, দোকান ও জমি বন্ধক নিয়ে জীবন যুদ্ধে জয়ী হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

রানা প্লাজার ভবন ধসে সরকারি হিসেবে গাইবন্ধা জেলায় নারীসহ অর্ধশতাধিক নিহত ও শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। এছাড়া আজও নিখোঁজ রয়েছেন অন্তত ১৫ জন। তবে এসব নিহত, আহত ও নিখোঁজদের অধিকাংশের বাড়ি গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলায়। সাদুল্যাপুর উপজেলায় ১৫ জন নিহত, ৭ জন নিখোঁজ ও ৪০ জন আহত রয়েছেন।

সাদুল্যাপুর উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের দামোদরপুর গ্রামের সোনিয়া আকতার। তিনি বলেন, ‘বাড়ি ছেড়ে চাকরি করতে যাই রানা প্লাজায়। চাকরি পাই সপ্তম তলায় ইউএন স্টাইল গার্মেন্টে ফিনিশিংয়ে। যে দুটি পায়ে ভর করে সংসারে স্বচ্ছলতা ও জীবনে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম ভবন ধসের কারণে সেই দুই পায়ের একটি কেটে ফেলতে হয়েছে। এখন ঠিকমতো হাঁটাচলা করতে পারি না।দুটি ক্রেস্ট এখন সম্বল।’

তিনি আরও বলেন, ‘সংসার গোছানে, সন্তান মানুষ করা সবই করতে হয় ক্রেস্টের উপর ভর দিয়ে। সরকারি ছাড়াও কয়েক দফায় প্রায় সাড়ে ৮ লাখ টাকা পেয়েছি। ওই টাকা দিয়ে স্বামীর বাড়িতে জমি বন্ধক নিয়ে চাষাবাদ করছি। এছাড়া স্বামীর সঙ্গে নিজ বাড়িতে ছোট একটি মুদির দোকান তৈরি করেছি। জমির ধান ও দোকানের আয় দিয়ে সংসার চলছে। তবে চেষ্টা করেও সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে পারছি না।’

রানা প্লাজার ভবন ধসে নিহত কিশামত দশলিয়া গ্রামের স্মৃতি রানীর মা সন্ধ্যা রানী বলেন, আজ মেয়েটা বেঁচে থাকলে প্রতি মাসে টাকা পেতাম। তা দিয়ে সংসার চলতো। মেয়েটিরও একটা সংসার হতো। কিন্তু মেয়ে আর নেই। ভবন ধসের তিনদিন পর মেয়ের লাশ খুঁজে পাই। মেয়ের নামে সরকারি ও বেসরকারিভাবে যে টাকা পেয়েছি তা দিয়ে গরু, ছাগল কিনেছি।

কিশামত দশলিয়া গ্রামের মোর্শেদা বেগম রানা প্লাজার চতুর্থ তলায় কাজ করতেন ক্লিনারের। ভবন ধসে হাত, পা ও ঘাড়ে প্রচণ্ড আঘাত পেলেও প্রাণে বেঁচে যান। আজও হাত, পা ও ঘাড়ের ব্যাথায় ভুগছেন। আহত হওয়ার ঘটনায় যে টাকা পেয়েছেন তা দিয়ে গরু পালন করে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে সংসার।


এদিকে, নিখোঁজ কামনা বেগমের ছোট অবুঝ শিশুটি তার মা ফিরে আসবে বলে সবাইকে বলে বেড়ায়। মা বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে তাও জানে না শিশুটি। বাবার কাছে প্রায় বায়না ধরে মায়ের জন্য। কিন্তু বাবা সোনা মিয়া জানেন না তার স্ত্রী বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন।

কামনা বেগমে স্বামী সোনা মিয়া বলেন, ‘ঘটনার আজ চার বছর পার হলেও স্ত্রী কামনার কোনও সন্ধান পাইনি। সে বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে তাও জানি না।অবুঝ ছেলে তার মায়ের কথা জিজ্ঞাস করলে উত্তর দিতে পারি না।’

সাদুল্যাপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. মনিরুজ্জামান মনির বলেন, ‘ রানা প্লাজার ভবন ধসের ঘটনায় শুধু সাদুল্যাপুর উপজেলায় ১৫ জন নিহত, ৪০ জন আহত ও ৭ জন নিখোঁজ রয়েছে। এসব প্রত্যেক পরিবারকে সরকারিভাবে সহযোগিতা করা হয়েছে।

সাদুল্যাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আহ্সান হাবীব বলেন, ‘রানা প্লাজায় হতাহতদের জন্য সরকারি ও বেসরকারিভাবে বরাদ্দের অর্থ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ব্র্যাক আহতদের স্বাবলম্বী করতে প্রকল্প নেওয়ার ব্যবস্থা নিচ্ছে। এছাড়া রানা প্লাজায় হতাহতদের বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোঁজ খবর নেওয়া হয়।’

এদিকে, ভবন ধসে নিহতদের পরিবারকে পুনর্বাসন, পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং আহতদের চিকিৎসাসহ প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা দিলে অল্প সময়ের মধ্যে এসব পরিবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে এমনটাই প্রত্যাশা হতাহতদের স্বজন ও এলাকাবাসীর।

/এআর/