গাইবান্ধার চার উপজেলায় ৪০টি গ্রাম প্লাবিত

গাইবন্ধায় চার উপজেলার ৪০টি গ্রাম প্লাবিত (ছবি-গাইবান্ধা প্রতিনিধি)

গাইবান্ধার যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি অব্যহত থাকায় জেলার সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ফলে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়া বালাসী-উড়িয়া সড়কসহ বেশ কিছু কাঁচা রাস্তাঘাট ও বিস্তীর্ণ এলাকার পাট, আমন বীজ তলাসহ ফসলী জমি তলিয়ে গেছে।

রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় বাঁশের সাঁকো ও নৌকা দিয়ে পার হতে গিয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন বানভাসী মানুষ। বন্ধ করা হয়েছে ফুলছড়ি উপজেলার কাইয়ারহাটসহ বেশ কিছু বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম। এছাড়া বাড়িতে থাকা গবাদী পশু গরু, ছাগল ও হাঁস-মুরগি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বানভাসী মানুষ।

রবিবার সকালে যমুনা-ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি পয়েন্টে বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে তিস্তা, করতোয়া ও ঘাঘট নদীর পানি বিপদসীমার নিচে রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী মো. মাহবুবুর রহমান।

বসতবাড়ি পানিতে ডুবে যাওয়ায় চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের পানিবন্দি অনেকে তাদের ঘরবাড়ি সড়িয়ে উঁচু বাঁধ, স্কুলের মাঠ ও রেলের জমিতে আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানে কোনও রকমে ছাপড়া বা ভেঙে আনা ঘর তুলে থাকছেন। এছাড়া অনেকে খোলা আকাশের নিচে না খেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।

গাইবন্ধায় চার উপজেলার ৪০টি গ্রাম প্লাবিত ২ (ছবি-গাইবান্ধা প্রতিনিধি)

এদিকে,বানভাসীদের মধ্যে ত্রাণের দাবি উঠলেও রবিবার সকাল পর্যন্ত কোনও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়নি। রবিবার দুপুর পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোথায় ত্রাণ বিতরণের খবর পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন বানভাসীদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। আজ কালের মধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হবে।

বালাসীঘাটের রেলে জায়গায় আশ্রয় নেওয়া রহিমা বেগম বলেন,‘দু বছরের বন্যা আর নদী ভাঙনে বসতভিটে বিলিন হয়ে গেছে। মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে দুটি ঘর ছিল। কিন্তু এবারের বন্যায় ঘর দুটিও তলিয়ে গেছে। তাই ঘর দুটি ভেঙে এনে রেলের জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন।’  

 গাইবান্ধায় পাট, আমন বীজ তলাসহ ফসলী জমি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে ( ছবি- গাইবান্ধা প্রতিনিধি)

উড়িয়া গ্রামের আজমল হক বলেন,‘চুলায় ও থাকার ঘরে পানি থৈ থৈ করছে। তিন দিন ধরে না খেয়ে আছি। তারপরও স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার বা সরকারের কেউ কোনও খোঁজখবর নিলো না।’

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক গৌতক চন্দ বলেন,‘বন্যা মোকাবেলার জন্য সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বানভাসী মানুষকে ত্রাণ সহায়তা দেওয়াসহ তাদের তদারকি ও খোঁজখবর নিচ্ছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসন। বানভাসীদের তালিকা অনুযায়ী দ্রুত ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন,‘আমি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ‘ডানতীর’ সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। ভাঙন এলাকা ও বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলো মেরামতের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশ দিয়েছিন।’ 

পানিবন্দি মানুষ ঘরবাড়ি সড়িয়ে উঁচু বাঁধে ও রেলের জমিতে আশ্রয় নিয়েছেন (ছবি- গাইবান্ধা প্রতিনিধি)

এদিকে, পানির প্রবল চাপে ফুলছড়ি ও সদর উপজেলার কামারজানি এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের ফলে গত এক সপ্তাহে অন্তত শতাধিক বাড়ি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। শত শত বাড়ি ভাঙনের মুখে রয়েছে। এছাড়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ডানতীরের বেশ কিছু পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী মো. মাহবুবুর রহমান জানান, এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যহত থাকলে চরাঞ্চলের আরও বেশ কিছু গ্রাম প্লাবিত হবে। এছাড়া নদী তীর ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙন ঠেকাতে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ চলছে। ভাঙন রোধে এরইমধ্যে ৩০০ কোটি টাকার বরাদ্দ অনুমোদন হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলো মেরামত করা হবে। 

/জেবি/

আরও পড়তে পারেন: রাজনগরে জ্বরে একই পরিবারের ২ শিশুর মৃত্যু, শতাধিক আক্রান্ত