রাজধানীর আশুলিয়ায় র্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করা জঙ্গি রাশেদুন নবী রাশেদ বগুড়া সাইক ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল টেকনোলজি কলেজের চতুর্থ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। গত দুই মাস ধরে তার কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না, বলে জানিয়েছে তার পরিবারের সদস্যরা। রাশেদ বগুড়ার একটি মেসে থেকে পড়াশোনা করতো।
রাশেদের বাড়ি গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার উদাখালি ইউনিয়নের দক্ষিণ উদাখালি গ্রামে। জেলা শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে ফুলছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশেই রাশেদের বাড়ি। তার বাবা রেজাউল করিম একজন হোমিও চিকিৎসক, মা রিনা বেগম গৃহিণী। রেজাউল করিমের পাঁচ ছেলে-মেয়ের মধ্যে রাশেদ চতুর্থ।
সোমবার (১৭ জুলাই) বিকালে সরেজমিনে রাশেদের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে। রাশেদের বাবা রেজাউল করিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পাঁচ ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রী নিয়েই আমার সংসার। হোমিও চিকিৎসা আর নিজের সামান্য কিছু জমি চাষাবাদ করে সংসার চলে। দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছি, এক মেয়ে প্রতিবন্ধী বলে বাড়িতেই থাকে। দুই ছেলের লেখাপড়ার খরচও চালাতে হয়।’
রাশেদের সম্পর্কে তার বাবা বলেন, ‘২০১৪ সালে জমিলা আক্তার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে রাশেদ। পরে বগুড়া সাইক ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল টেকনোলজিতে ২০১৪-২০১৫ সেশনে (ডিপ্লোমা ইন ল্যাবরেটরি মেডিসিন কোর্স) ভর্তি হয় রাশেদ। বগুড়া শহরের সূত্রাপুর এলাকার আরএম ছাত্রবাস নামে একটি মেসে থাকে।’
রাশেদের পরিবারের সদস্যরা জানান, মাঝে-মধ্যে বাড়ি আসত রাশেদ। সর্বশেষ সে বাড়ি আসে ২৭ এপ্রিল। ২ মে তার কলেজে সেমিস্টার পরীক্ষা ছিল। এর আগের দিন ১ মে আড়াই হাজার টাকা নিয়ে সে বাড়ি ছাড়ে। কিন্তু ওই পরীক্ষায় অংশ নেয়নি রাশেদ। সেই খবর কলেজ কর্তৃপক্ষই মোবাইল ফোনে জানায় তার পরিবারকে।
রেজাউল করিম আরও বলেন, ‘সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজাখুজি করেও রাশেদের কোনও সন্ধান পাইনি। পরে গত ২২ মে ওর ভাই রায়হান থানায় জিডি করে। রাশেদ জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত ছিল কি না, তা কখনও বুঝতে পারিনি।’ ছেলে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে গেছে, তা মেনে নিতে পারছেন না তিনি। তবে সে অপরাধী হলে তার শাস্তি চান তিনি।
রাশেদের মা রিনা বেগম বলেন, ‘ছেলে হিসেবে রাশেদ যথেষ্ট নম্র-ভদ্র ছিল। কখনও কারও সঙ্গে খারাপ আচরণ করেনি। অথচ ছেলে আমার আজ অপরাধী হয়েছে। অপরাধের কারণে র্যাব তাকে ধরেছে।’ বলতে বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
রাশেদ সম্পর্কে প্রতিবেশী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘রাশেদকে আমরা ভালো ছেলে হিসাবেই জানি। গ্রামের কারও সঙ্গে ওর কোনও বিরোধ ছিল না। আচার-ব্যবহারও ভালো ছিল।’
রাশের স্কুল উদাখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুল হামিদ বলেন, ‘রাশেদকে এলাকার লোকজন ভালোই জানত। তাছাড়া আচার-ব্যবহার ও চলাফেরাতেও কখনও খারাপ কিছু দেখিনি।’
এদিকে, রাশেদের বিরুদ্ধে স্থানীয় থানাতেও নেই কোনও অভিযোগ নেই বলে জানান ফুলছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু হায়দার মো. আশরাফুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘র্যাবের হাতে রাশেদের আটকের খবর শুনেছি। তবে রাশেদের বিরুদ্ধে ফুলছড়ি থানায় কোনও অভিযোগ বা মামলা নেই।’ রাশেদের পরিবার সম্পর্কে তিনি আরও খোঁজ-খবর নিচ্ছেন বলে জানান।
/টিআর/এমও/