জানা গেছে, সৈয়দপুর-রংপুর মহাসড়কের পাশে উপজেলা শহরের কামারপুকুরে অবস্থিত স্বাদু পানি উপকেন্দ্রটি প্রায় ১০ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত। ২০০৩ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ জেলার বিলুপ্ত প্রায় ৫০ প্রজাতির দেশি মাছ নিয়ে গবেষনা, জাত উদ্ভাবন, চাষিদের উদ্বুদ্ধকরণ ও হাতে কলমে শিক্ষা, পরামর্শ ও প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটি কাজ করে যাচ্ছে।
এই উপকেন্দ্রের মাধ্যমে রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট জেলাসহ উত্তরের বিভিন্ন জেলায় দেশি জাতের মাছ চাষ ও প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে। এখানে ১৫টি পুকুরে মাগুর, শিং, কৈ, রুই, কাতলা, জেনাটিক্যালি ইমপ্রুভড তেলাপিয়া (গিফ্ট), সরপুটি, টেংরা, ভোদা, শোল, টাকি, খলিশা, গুতুমসহ নানা প্রজাতির বিলুপ্ত মাছের জাত উন্নয়ন নিয়ে কাজ চলছে। স্বাদু পানি উপকেন্দ্রটিতে তিনজন কর্মকর্তাসহ ১৭ জন কর্মচারি সার্বক্ষণিক কাজ করছেন।
সূত্র জানায়, সারাদেশে এ ধরনের উপকেন্দ্র রয়েছে পাঁচটি। এর মধ্যে সৈয়দপুর স্বাদু পানি উপকেন্দ্রের একদল বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বিপন্ন প্রজাতির টেংরা মাছের প্রজনন ও পোনা উৎপাদনে সফলতা দেখিয়েছেন। ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. খোন্দকার রশীদুল হাসানের নেতৃত্বে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মালিহা হোসেন মৌ ও শওকত আহম্মেদ এই কৃতিত্ব দেখিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, ব্রড প্রতিপালন পুকুরের চারপাশে জালের বেষ্টনি দিয়ে ঘেরা দিতে হবে। সেইসঙ্গে নির্দেশিকা মতো খাবার ও যত্ন নিতে হয়।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে স্বাদু পানি উপকেন্দ্র থেকে সরকারি কর্মকর্তা, মাছ চাষি, খামারিসহ প্রায় ১২০০ জনকে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কেউ কেউ প্রশিক্ষণলব্ধ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সফলতা অর্জন করেছেন।
টেংরা গবেষণা দলে থাকা নারী বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মালিহা হোসেন মৌ বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, টিমে কাজ করতে পেরে নিজেকে খুব গর্বিত মনে করছি। সুস্বাদু টেংরা যার বৈজ্ঞানিক নাম (Mystus Vitttus)। এই জাতের মাছ এখন মানুষ আরও বেশি বেশি খেতে পারবেন।
উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম লোকমান জানান, স্বাদু পানি উপকেন্দ্রটি পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রে রুপান্তর করা প্রয়োজন। কারণ এতে করে বৈজ্ঞানিকরা যথেষ্ট গবেষণা করার সুযোগ পাবেন। এছাড়া বিলুপ্ত প্রায় দেশি জাতের মাছ চাষ করে চাষিরা উপকৃত হওয়ার পাশাপাশি আমিষসহ মাছের ঘাটতি থাকবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষনা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সৈয়দপুরের স্বাদু পানি উপকেন্দ্রটি পরিদর্শন করে ভালই লাগছে।
তিনি জানান, বিলুপ্ত প্রায় ৫৭ প্রজাতির দেশি মাছ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে স্বাদু পানি উপকেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।
এই কেন্দ্রের উদ্ভাবিত টেংরা মাছের প্রজনন, রেণু পোনা তৈরি ও লালন-পালনের প্রযুক্তি মৎস্য অধিদফতরের কাছে ইতোমধ্যে হস্তান্তর করা হয়েছে। ফার্ম ম্যানেজারদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি দেশি জাতের এই টেংরা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
/বিএল/