নীলফামারীতে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকটে দুই লাখ বানভাসি

নীলফামারীতে বন্যানীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকায় তিস্তার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও ক্ষতিগ্রস্তদের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। দুই লক্ষাধিক মানুষের বিশুদ্ধ পানি আর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্য সেবা। ডিমলায় পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের বন্যায় তিস্তা পাড়ের ৩০১টি পরিবারের বসতভিটা বিলীন হলেও মাত্র ৮০টি পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য যে পরিমাণ ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি সামান্য বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, ডিমলায় বন্যায় ৮টি বাঁধ ভেঙে ১০টি কাঁচা রাস্তা ও ৪টি কালভার্ট ভেসে গেছে। ওই এলাকার তিন শতাধিক একর জমির ধানক্ষেত পানিতে তলিয়ে আছে। মৎস সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

বুধবার (১৬ আগস্ট) বিকালে পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের তিস্তার বাঁধে আশ্রিত দুর্গতদের মধ্যে বিজিবির উদ্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ ১৫০ পরিবারের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করেন ৭ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মাহফুজ উল বারী। একই এলাকায় খোকার চরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ ১৭৭ জনকে স্বাস্থ্যসেবা ও বিনামূল্যে ওষুধ দেওয়া হয়। স্বাস্থ্যসেবা দেন মেজর ডা. আফসানা মাহামুদা। 

রংপুর ৭ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মাহফুজ উল বারী জানান, গত ৩দিনে সাড়ে চারশ দুর্গত পরিবারকে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। আগামী শনিবার (১৯ আগস্ট) উপজেলার খগাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের কিসামত ছাতনাই গ্রামে ৩০০ পরিবারের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করা হবে।নীলফামারীতে বন্যা

ডিমলার বন্যায় ৮ হাজার ৬৮৫ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বরাদ্দ কম থাকায় ৩ হাজার ৪শ পরিবারকে শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে বলে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী অফিস দাবি করছে। ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান অভিযোগ করেন, ‘এখনও অধিকাংশ পরিবার ত্রাণ ও শুকনো খাবার পায়নি। যে পরিমাণ শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় কম।’

খগাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম লিথন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ করা হলেও শুকনো খাবারের সংকট রয়েই গেছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো ঘরবাড়ি হারিয়ে বাঁধের ওপর মানবেতর জীবন-যাপন করছে। তাদের বিশুদ্ধ পানি এবং খাবারের তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকায় সরকারি ত্রাণ সামগ্রী এলেও তা পর্যাপ্ত নয়।’

জানা গেছে, বাঁধে আশ্রয় নেওয়া নারীরা স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা বা শৌচাগারের অভাবে বিপাকে পড়েছেন। বন্যার কারণে পিছিয়ে পড়ছে বানভাসি ছেলেমেয়েদের পড়ালেখাও। বন্যার পানিতে ভেসে গেছে অনেকের পাঠ্য বই। পূর্ব ছাতনাই খোকার চড়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী তহমিনা আখতার বলেন, ‘দুই মাস পরে বাৎসরিক পরীক্ষা। বন্যার কারণে বাঁধে আছি। পড়াশোনা করার পরিবেশ নেই। ছোট একটু জায়গায় দুটি ছাগল, হাঁস মুরগী, আমরা পাঁচজন মিলে কোনও রকমে বেঁচে আছি।’

নীলফামারীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খালেদ রহীম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তিস্তায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য ৯৩ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৭ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কোন কোন ইউনিয়নের কত পরিবার কেন শুকনো খাবার পায়নি তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়াও ঢাকায় আরও ১০ লাখ টাকা ২২৫ মেট্রিক টন চাল ও ৫ হাজার শুকনা খাবারের চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।’

/এফএস/

আরও পড়ুন- ঝুঁকির মুখে ঢাকা রক্ষা বাঁধ, পূর্বাঞ্চল সম্পূর্ণ অরক্ষিত