ধর্মঘট তুলে নেওয়ার আলোচনা পণ্ড, দুর্ভোগে যাত্রীরা

দিনাজপুরে বাস ধর্মঘটকোনও ধরনের সমঝোতা ছাড়াই ভেস্তে গেছে দিনাজপুরে চলমান পরিবহন ধর্মঘট স্থগিতের উদ্দেশ্যে আয়োজিত বৈঠক। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত সভাতেই ধর্মঘট অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন বাস মালিক গ্রুপ ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। এদিকে ধর্মঘটের কারণে প্রায় দুইদিন ধরে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের।

দিনাজপুরের হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং মোটর শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষের জের ধরে বুধবার (২২ নভেম্বর) রাত থেকে জেলায় অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট পালন করছে মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন। ফলে দুদিন ধরে জেলার অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার রুটে বাস-ট্রাকসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। একটি বাসকে সাইড দেওয়াকে কেন্দ্র করে ছাত্রদের সঙ্গে মোটর পরিবহন শ্রমিকদের সংঘর্ষে উভয়পক্ষের কয়েকজন আহত হন। এই ঘটনায় দুটি বাসে অগ্নিসংযোগসহ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেন বিক্ষুদ্ধ ছাত্ররা। বাসে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং শ্রমিকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বুধবার রাত থেকেই দিনাজপুর মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বী অনির্দিষ্টকালের এই পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেন।

এদিকে বৃহস্পতিবার বিকালে সংকট নিরসনে দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং মোটর শ্রমিক ও মোটর মালিকদের নিয়ে এক সমঝোতা বৈঠকে বসেন। এই বৈঠকে দিনাজপুরের পুলিশ সুপার হামিদুল আলম, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. শফিকুল ইসলাম, জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি জাহিদ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম সেলু, জেলা মোটর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি এম. রফিক, সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। তবে কোনও সমঝোতা ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়ে যায়। দিনাজপুর মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বী বলেছেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত যানবাহনের ক্ষতিপূরণ দেওয়া না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের ধর্মঘট চলবে।’হিলি স্থলবন্দরে আটকে পড়া যাত্রীরা

এদিকে ধর্মঘটের কারণে দিনাজপুরের সঙ্গে সারা দেশের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে থাকায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। ধর্মঘটে অংশ নেওয়া শ্রমিকরা দিনাজপুর সরকারি কলেজ মোড় ও মির্জাপুর বাস টার্মিনালে অবস্থান নিয়ে বাস-ট্রাকের পাশাপাশি ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, মোটরসাইকেল ও সাইকেল চলাচলেও বাধা দেয়। ফলে বাধ্য পায়ে হেঁটেই চলাচল করতে হয়েছে সাধারণ যাত্রীদের।

এদিকে ধর্মঘট চলাকালে দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সামনের সড়কে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। তারাও ক্যাম্পাসের সামনের সড়ক দিয়ে কোনও ধরনের যানবাহন চলাচলে বাধা দেন।

হিলি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, হিলি দিয়ে ভারত থেকে আসা যাত্রীরাও পড়েছেন দুর্ভোগে। ভারত থেকে দেশে ফেরত আসা ও ভারত থেকে বাংলাদেশে আসা যাত্রীরা অনেকে ইমিগ্রেশন চেকপোস্টসহ বিভিন্ন কাউন্টারে বাসের অপেক্ষা করছেন। আবার কেউ কেউ বিকল্প পন্থায় গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন।

জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম বৃহস্পতিবার রাতে সাংবাদিকদের বলেন, ‘যানবাহন ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগসহ পুরো বিষয়টি জানতে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন দিনের মধ্যেই এই কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করবে। প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, বুধবার সন্ধ্যা সোয়া ৬ টার দিকে দিনাজপুর হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের বহন করা একটি বাসের সঙ্গে তৃপ্তি পরিবহন নামে একটি বাসের সাইড দেওয়াকে কেন্দ্র করে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে ছাত্ররা এসে শ্রমিকদের মারধর করে ও বাস ভাঙচুর করে। এ সময় শ্রমিকরাও পাল্টা আক্রমণ করে। এ সময় এক শিক্ষার্থী ও তিন শ্রমিক আহত হন। তিন জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এই ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের সামনে রাস্তায় বাঁশ ফেলে ও টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করে। এ সময় কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুরসহ দু’টি বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়।