২০০৭ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর তার বাম পায়ে অস্ত্রোপচার করা হয়। তখন একেবারে বেকার হয়ে পড়েন তিনি। উপায় না পেয়ে বাবার দেওয়া ৫ শতাংশ জমি বিক্রি করেন। সেই তহবিল দিয়ে প্রথমে ফেরিওয়ালার (হকার) কাছ থেকে পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল কেনেন। পরে সেগুলো সৈয়দপুরে মহাজনের কাছে বিক্রি শুরু করেন। এরপর ধীরে ধীরে ব্যবসার উন্নতি হলে রিসাইকিক্লং মেশিন কিনে যাত্রা শুরু হয় কাটিংয়ের (চিপ) কাজ।
বর্তমানে এসব পণ্য ঢাকার ইসলামবাগ, ভারত, চীনসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হচ্ছে। তিনি জানান, ভারতে এগুলো দিয়ে প্লাস্টিকের সুতা তৈরি করা হয়।
একই এলাকার নুরি এন্টারপ্রাইজের মালিক আনোয়ার হোসেনও প্লাস্টিকের বোতল প্রক্রিয়াজাত করেন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রক্রিয়াজাতের পর ওইসব কাঁচামাল দিয়ে তার কারখানায় গৃহস্থালির বিভিন্ন জিনিস তৈরি করা হয়।’
এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক খালেদ রহীম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দেশীয় পণ্য উৎপাদন করে স্থানীয় বাজারে বাজারজাত করা একটি ভালো উদ্যোগ। এ জাতীয় ব্যবসায়ীদের সরকারিভাবে আর্থিক সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার সুযোগ থাকলে তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। তাদের ব্যাংক ঋণসহ সব সুবিধা দেওয়া যেতে পারে।’
জেলা সদর ছাড়াও ডোমার, ডিমলা, জলঢাকা, কিশোরগঞ্জ, বিষেশ করে বাণিজ্যিক শহর সৈয়দপুরে এ ধরনের ছোট-বড় অনেক কারখানা গড়ে উঠেছে।
শারীরিক প্রতিবন্ধী কালু প্রায় ১২ বছর ধরে ওই ব্যবসায় (রিসাইক্লিং) জড়িত। তিনি বলেন, ‘গ্রাম ঘুরে ফেরিওয়ালারা চানাচুর, আচার, সুঁই-সুতা ও চকলেটের বদলে এসব প্লাস্টিকের বোতল ও ভাঙ জিনিসপত্র কেনেন। পরে কেজি দরে তা আমাদের কাছে বিক্রি করেন। প্রকারভেদে প্রতি কেজি ২০ থেকে ২৬ টাকায় বিক্রি করেন তারা।’
শারীরিক প্রতিবন্ধী কালু জানান, এগুলো কারখানায় এনে বাছাই করে প্রকার ও রঙ ভেদে আলাদা করে মেশিনের সাহায্যে তা প্রক্রিয়াজাত (কাটিং) করে পাউন্ড হিসেবে বিক্রি করা হয়। প্রক্রিয়াজাত করার পর তা প্রতি কেজি ৪৮ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করা হয়। প্রতি মাসে তার আয় হয় লক্ষাধিক টাকা। আনুষঙ্গিক খরচ বাদ দিয়ে লাভ থাকে অর্ধেকের বেশি।
একই কারখানার শ্রমিক শাহানাজ বেগম বলেন, ‘এসব ফেলে দেওয়া পণ্য থেকে বয়াম, জগ, চেয়ার, প্লাস্টিকের সুতা, বয়ামের ঢাকনা, বালতি, বাইসাইকেলের পাদানিসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি হচ্ছে। গ্রামের নারীরা এ কাজে যুক্ত হয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন।’
কারখানার মালিক কালু জানান, প্রতিদিন প্রায় ১০-১২ জন শ্রমিক এখানে কাজ করেন। দিনশেষে প্রত্যেককে ১৫০ টাকা করে দিতে হয়।’