হিলিতে দুই দেশের ভাষাপ্রেমীদের মিলনমেলা

হিলিতে দুই দেশের ভাষাপ্রেমীদের মিলনমেলাদিনাজপুরের হিলিতে দুই বাংলার যৌথ উদ্যোগে পালিত হলো মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ‘বাংলা ভাষার মেলবন্ধনে হই একাকার’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে ভারত-বাংলাদেশ যৌথভাবে দিবসটি পালন করেছে। দুই দেশের বাংলা ভাষাপ্রেমীদের এক মিলন মেলায় পরিণত হয় হিলি সীমান্ত।

ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুর তিওরের উজ্জীবন সোসাইটি ও বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের যৌথ আয়োজনে এবং হাকিমপুর পৌরসভা, উপজেলা আওয়ামী লীগসহ সব সহযোগী সংগঠন, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কমান্ড, সাপ্তাহিক আলোকিত সীমান্ত, হিলি স্থলবন্দর উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সহযোগিতায় হিলি সীমান্তের শূন্যরেখার পাশে অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়।হিলিতে দুই দেশের ভাষাপ্রেমীদের মিলনমেলা

বুধবার সকাল ১০টায় ভারতের উজ্জীবন সোসাইটির সম্পাদক সুরজ দাস ও বালুরঘাট হিলি টু মেঘালয় করিডোর কমিটির আহ্বায়ক নবকুমার দাশের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল হিলি সীমান্তের শূন্যরেখায় আসেন। এসময় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার লিয়াকত আলী ও পৌর মেয়র জামিল হোসেন চলন্ত তাদের শুভেচ্ছা জানান এবং তাদের প্রত্যেককে উত্তরীয় পরিয়ে দেন। এসময় সীমান্তে বিজিবি ও বিএসএফের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সকাল ১১টার দিকে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

পরে সীমান্তের শূন্যরেখার পাশে মুক্তিযোদ্ধা স্কয়ারে নির্মিত মঞ্চের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। সেখানে অস্থায়ী শহীদ মিনারে বাংলাদেশ ও ভারত থেকে আসা অতিথিরা যৌথভাবে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি সন্মান জানান। পরে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।হিলিতে দুই দেশের ভাষাপ্রেমীদের মিলনমেলা

দিবসটি উপলক্ষে হিলি সীমান্তে দুই পাশেই বিপুল সংখ্যক বাংলা ভাষাভাষী মানুষ ভিড় জমান। তবে সীমান্তরক্ষীদের বাধায় তারা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেননি।

ভারতের উজ্জীবন সোসাইটির সম্পাদক সুরুজ কুমার দাস বলেন, ‘এপার বাংলা ওপার বাংলা এই দুই বাংলার মেলবন্ধনে হিলি সীমান্তে একত্রিত হয়েছি। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করার জন্য আমরা ভারতীয় প্রতিনিধিরা আজ অমর একুশের এই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছি। এই দিনটিকে উদযাপন করার জন্য দুই বাংলার মানুষের যে আবেগ আজ উচ্ছাসের পর্যায়ে চলে গেছে। আমরা এই দিনটাকে অতি সুন্দরভাবে পালন করার চেষ্টা করছি। প্রতি বছর আমরা এই আয়োজন করে থাকি। এবছরও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের এই উপলক্ষকে আমরা সারা বিশ্বের কাছে তুলে ধরবো। দুই দেশের এই প্রয়াস আগামী দিনেও জারি থাকবে।’হিলিতে দুই দেশের ভাষাপ্রেমীদের মিলনমেলা

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মো. মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার এমপি বলেন, ‘অমর একুশের দিনটি আগে তো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ছিল না।  শুধু বাঙালিদের ছিল। অন্যরা আমাদের দেখে অনুপ্রাণিত হতেন। আর এখন এই দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে গণ্য হচ্ছে। মানে এটা শুধু দুই বাংলার বিষয় নয়। সারা দুনিয়ার মানুষ মাতৃভাষার জন্য আমাদের অনুভূতি বুঝতে পারতেছে। ভাষার জন্য আমাদের এ আত্মত্যাগের এই দিনটিকে সারা দুনিয়া এখন সমাদর করছে। আজকের এই অনুষ্ঠানে আমি উপস্থিত থাকতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি।’

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার লিয়াকত আলী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে হিলি সীমান্তের শূন্যরেখায় দুই বাংলার ভাষাপ্রেমীদের যে মিলনমেলা সেটি যেন আগামীতে আরও ভালোভাবে উদযাপন করতে পারি সে চেষ্টা আমরা করবো।’হিলিতে দুই দেশের ভাষাপ্রেমীদের মিলনমেলা

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার লিয়াকত আলীর সভাপতিত্বে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহিনুর রেজা শাহিনের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন পৌর মেয়র জামিল হোসেন, জয়পুরহাট-২০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল রাশেদ মোহাম্মদ আনিসুল হক, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এমদাদুল হক, সম্পাদক আব্দুর রহমান লিটন, হিলি স্থলবন্দর আমদানি রফতানিকারক গ্রপের সভাপতি হারুন উর রশীদসহ অনেকে।হিলিতে দুই দেশের ভাষাপ্রেমীদের মিলনমেলা

আলোচনা সভা শেষে মন্ত্রী সীমান্তের শূন্যরেখার পাশে ভারত-বাংলাদেশের প্রবেশ পথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার ছবি সম্বলিত স্বাগতম বোর্ডের উদ্বোধন করেন। পরে উপজেলা শিল্পকলা একাডেমি ও ভারতীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। বিপুল সংখ্যক দর্শক অনুষ্টানটি উপভোগ করেন।

আরও পড়ুন- ভাষার মেলবন্ধন বেনাপোল সীমান্তে