একদিকে প্রিয়তম স্বামী হারানোর বেদনা, সহায়-সম্বলহীন হয়ে বেঁচে থাকার সংগ্রাম—এভাবেই দিন কাটছে জাঠিভাঙ্গা গণহত্যায় প্রাণ হারানো শহীদদের স্ত্রীদের। বিধবা এই তিনশ’ নারীর কারও দিন চলে ভিক্ষা করে, কেউবা করেন দিনমজুরের কাজ। স্থানীয়রা বলছেন, সেদিন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে প্রাণ হারানো ব্যক্তিদের শহীদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া উচিত। আর সেদিন বিধবা হওয়া নারীদের দায়িত্বও নিতে হবে রাষ্ট্রকেই।
সেই গণহত্যায় আত্মদানকারী পরিবারের তিন শতাধিক বিধবা বেঁচে আছেন খেয়ে না খেয়ে। বয়সের ভারে নুয়ে পড়লেও আজও অনেকেই বয়স্ক বা বিধবা ভাতা পাচ্ছেন না।
সদর উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের তিরপা মোহন গণহত্যায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নানা রোগে এখন শয্যাশায়ী। প্যারালাইসিসে আক্রান্ত তিরপা মোহন চিকিৎসা করাতে পা পেরে পঙ্গু জীবনযাপন করছেন।
জগন্নাথপুরের আশামনি বেওয়া ও জাঠিভাঙ্গা বুড়াশিব গ্রামের ভুটরী বেওয়া অভিযোগ করে বলেন, একটি বিধবা ভাতার কার্ডে তিন মাস পরপর পাই মাত্র ৯শ’ টাকা। এ দিয়ে কি সংসার চলে? আর শীতের মৌসুম এলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাই একটি কম্বল। সারা বছর আর কেউ কোনও খবর রাখে না। কেউ জানে না আমাদের দিন চলে কীভাবে।
দেশ স্বাধীন হওয়ার ৪৭ বছর পেরিয়ে গেলেও স্বামীহারা বিধবা ও স্বজনহারা মানুষগুলো আজও পায়নি শহীদ পরিবারের মর্যাদা। বিধবাদের পুনর্বাসনে জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট তাগাদা দিলেও তাতে কোনও কাজ হয়নি।
ঠাকুরগাঁওয়ের ভারপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বদিউদ্দৌজা বদর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গণহত্যায় শহীদদের বিধবাদের স্বীকৃতির জন্য অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৭ বছরেও সরকার বিষয়টি নজরে নেয়নি। আমরা সবাই চাই, ওই গণহত্যায় বিধবা হওয়া নারীদের স্বীকৃতি মিলুক।
এই পরিবারগুলোকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হোক—সরকারের কাছে এমন অনুরোধ করেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান তৈমুর রহমান।
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক আকতারুজ্জামান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সরকার কাজ করে যাচ্ছে। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় জাঠিভাঙ্গা গণহত্যার শহীদ পরিবারগুলোর স্বীকৃতি ও সরকারি সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করবো।