প্রাকৃতিক উৎস থেকে মাছ উৎপাদন কমেছে পঞ্চগড়ে

ছবিটি জেলার সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নের ভিতরগড় এলাকা থেকে তোলাপঞ্চগড় জেলায় প্রাকৃতিক উৎস থেকে মাছ উৎপাদন না হওয়ায় হাটবাজারে দেশীয় মাছ উঠছে না। মুক্ত জলাশয়গুলোতে এক সময় বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে কৈ, শোল, বোয়াল, মাগুর, শিং, ফলি, পুঁটি, চিংড়ি, পয়া, গচি, চোপড়া, পাবদাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। কিন্তু এখন সে চিত্র আর নেই।

সদর উপজেলার তালমা এলাকার আসিরল ইসলাম জানান, আগে তাও করতোয়া নদীতে কিছু মাছ পাওয়া যেত, এখন নদীতে তেমন মাছ পাওয়া যায় না।

সদর উপজেলার ধাক্কামারা ইউনিয়নের মীরগড় এলাকার সহিমউদ্দিন জানান, ১০ বছর আগেও গ্রামাঞ্চলের মানুষ ছোট মাছের চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত মাছ শুকিয়ে সংরক্ষণ করতো। কেউ শুঁটকি কেউবা সিদল তৈরি করতো। বর্তমানে এসব এখন কল্পনাতীত। এখন তো খাওয়ার মাছই পাওয়া যায় না।

পঞ্চগড় বাজারের মাছ ব্যবসায়ী আমিরুল ইসলাম ও দুলাল জানান, দেশি মাছের চাহিদা বেশি থাকায় দামও বেশি। পয়া মাছের কেজি ৬শ টাকা, সাটি মাছের কেজি ৩শ থেকে ৫শ টাকা। দেড়িকা (দারকিনা) পুটি মাছের কেজিও এখন ২শ টাকার ওপরে। 

পঞ্চগড়ের মাছ ব্যবসায়ী আব্দুস সাত্তার জানান, প্রাকৃতিক আবাসস্থল ধ্বংস হওয়া এবং ছোট মাছ সংরক্ষণে সরকারি বা ব্যক্তি পর্যায়ে উদ্যোগ না থাকায় ছোট জাতের মাছ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। জমিতে সার কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহার, ডিম দেওয়া মাছ, পোনা মাছ মেরে ফেলায় এখন দেশি জাতের মাছ বিলুপ্ত হয়ে পড়েছে।

পঞ্চগড়ের সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সানি খান মজলিস জানান, পঞ্চগড়ে মাছের চাহিদা ১৮ হাজার মেট্রিক টন। উৎপাদন প্রায় ১৬ হাজার মেট্রিক টন। ঘাটতি ২ হাজার মেট্রিক টন। পঞ্চগড়ে পুকুরের সংখ্যা প্রায় ১২ হাজার। এরমধ্যে তিন হাজার পুকুরে সারা বছর পানি থাকে। আর অবশিষ্ট পুকুরগুলো মৌসুমী। বছরের ৩ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত পানি থাকে। এ জেলার মাটি বালু কংকরময় হওয়ায় এখানে পানি এমনিতেই কমে যায়।  গোটা পঞ্চগড় জেলায় ১৬টি অভয়াশ্রম রয়েছে। তিনি জানান, প্রতি বছর শুকনো মৌসুমে একাধিক খাল, বিল, পুকুর, ডোবা-নালা সেচের মাধ্যমে ডিমওয়ালা মাছসহ বিভিন্ন প্রকারের মাছ শিকার করা হয়। যেসব পুকুর সেচ দিয়ে মাছ শিকার করা হয় সেসব পুকুরগুলোতে চিরতরে অস্তিত্ব হারায় দেশি মাছ। দেশি মাছ চাষের জন্য ১৫শ কৃষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

পঞ্চগড় জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. আফতাব হোসেন জানান, দেশি মাছের উৎপাদন ও বিলুপ্তি ঠেকাতে উপজেলার জলজ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং মা মাছের নির্বিঘ্নে বড় হওয়া ও প্রজননের সুযোগ সৃষ্টি করার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এ জন্য প্রতিটি উন্মুক্ত জলাশয়, খাল-বিল ও নদীতে অভয়াশ্রম তৈরি করা দরকার। এছাড়া দুই-তিন বছর নির্দিষ্ট স্থানে মাছ না ধরা, নদী ও খাল-বিলে নতুন পানি আসার সময় সূক্ষ্ম জাল দিয়ে অবাধে মা মাছ ও পোনা মাছ না ধরলে দেশি প্রজাতির মাছের উৎপাদন বাড়বে। জেলার কিছু কিছু খাল বিল ও পুকুর খনন করে তাতে পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করলেও দেশীয়  মাছের সুদিন ফিরে আসতে পারে।