কচুরিপানা অপসারণে নবাবগঞ্জের আশুড়ার বিলে নামলেন ইউএনও

01দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার জাতীয় উদ্যান ও আশুড়ার বিলের সৌন্দর্য্য ফিরিয়ে আনতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। আর এই উদ্যোগকে বাস্তবে রূপ দিতে বিলের কচুরিপানা পরিষ্কার করতে নিজেই নেমে পড়লেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তার এমন উদ্যোগ দেখে এলাকার আরও অনেকে তার সঙ্গে বিলে নেমে পড়েন।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, নবাবগঞ্জের আশুড়ার বিল ও জাতীয় উদ্যানের সৌন্দয্য বৃদ্ধি ও কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে জাতীয় উদ্যানে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপন ও ন্যপাখিদের আবাসস্থল গড়তে গাছে গাছে হাড়ি বেঁধে দেওয়া। আর বিলের সৌন্দয্য বাড়াতে সেখানে লাল শাপলার চাষ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে বিলে অনেক কচুরিপানা থাকায় লাল শাপলা চাষ করা কঠিন হচ্ছে। এই কারণে বিলটির কচুরিপানা অপসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ওই উদ্যোগ বাস্তবায়নের এলাকাবাসীকে উদ্বুদ্ধ করতেই এমন ব্যতিক্রমী কাজ করে বসেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মশিউর রহমান।
শুক্রবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ইউএনও বিলের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে কচুরিপানা পরিষ্কার করেন। একই সঙ্গে বিলের মধ্যকার বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা ও মাছ ধরার সরঞ্জামাদিও ধ্বংস করেন তিনি। ওই সময় তার সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শাহ্ জিয়াউর রহমান ও নবাবগঞ্জ বন বিট কর্মকর্তা নিশিকান্ত মালাকার উপস্থিত ছিলেন।
নবাবগঞ্জ বন অফিস জানায়, ৫১৭ দশমিক ৬১ হেক্টর এলাকার সংরক্ষিত বন নিয়ে গঠিত জাতীয় উদ্যানটিতে সেগুন, গামার, কড়ই, জামসহ প্রায় ৩০ প্রজাতির গাছ রয়েছে। বনটিকে ২০১০ সালে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। একই সময় আশুরার বিলকেও ঘোষণা করা হয় মাছের অভয়াশ্রম হিসেবে। নবাবগঞ্জ অংশের ২৫১ হেক্টর ও বিরামপুর অংশের ১০৯ হেক্টর নিয়ে এই বিলের বিস্তৃতি। জাতীয় উদ্যান ও মৎস্য অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণার পর দীর্ঘদিনেও স্থান দুটি অবহেলিত ছিল।
নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মশিউর রহমানের উদ্যোগে বনের চারপাশে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপন ও বন্যপাখিদের আবাসস্থল গড়তে গাছে গাছে হাঁড়ি বাঁধার কাজ করা হয়। কই সঙ্গে বিলে লাল শাপলার বেড়ে উঠতে সহায়তার জন্য বিল থেকে কচুরিপানা অপসারণের কাজও চলছে। শুক্রবার এসব কাজে এলাকাবাসীকে উদ্বুদ্ধ করতে ইউএনও নিজেই বিলে নেমে পড়েন।
উদ্যানে কর্মরত শ্রমিকরা জানান, উদ্যানটির বিভিন্ন গাছে ইতোমধ্যে ৫ হাজারের মতো মাটির হাঁড়ি স্থাপন করা হয়েছে। নতুন গাছগুলোর মধ্যে কাঞ্চন, জারুল ও শিমুল গাছ রোপন করা হয়েছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির আনাগোনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব হাঁড়িতে অনেক পাখি ডিম দিয়ে বাচ্চা ফুটাচ্ছে।
নবাবগঞ্জ বন বিট কর্মকর্তা নিশিকান্ত মালাকার বলেন, নবাবগঞ্জ জাতীয় উদ্যানে বিভিন্ন ধরনের পশু ও পাখি রয়েছে। রয়েছে সীতার কোট বিহার, মুনির থান, আশুড়ার বিলের আর তর্পন ঘাটসহ বিভিন্ন পুরাকীর্তির ধ্বংসাবশেষ। এসবের প্রতি পর্যটক বাড়ানোর জন্যই এমন উদ্যোগ নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বলেন, জাতীয় উদ্যানে পর্যটন ও বিনোদনের ব্যাপক সম্ভাবনা আছে। তবে এর সৌন্দর্য বর্ধণে অর্থের চেয়ে স্বদিচ্ছার বেশি প্রয়োজন। এখানে আবাসস্থলের অভাবে আর এসব পাখি আসছে না। তাই কৃত্রিমভাবে মাটির হাঁড়ি স্থাপন করে পাখির নিরাপদ আবাসস্থল করে দেওয়া হয়েছে।