ঈদে বাড়িতে আসার কথা ছিল রুমকি-মাকসুদার

রুমকি ও মাকসুদারঈদুল ফিতরের ছুটিতে বাড়িতে আসার কথা ছিল মাকসুদার (৩১) ও রুমকি বেগম (২৮) দম্পতির। কিন্তু, তার আগেই তাদেরকে পৃথিবী ছাড়তে হলো। বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) ঢাকার বনানীতে এফ আর টাওয়ারে লাগা আগুনে তারা মারা যান।

রুমকি সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। এই দম্পতি একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে চাকরি করতেন।

মাকসুদারের বাড়ি পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া এলাকায়। তার বাবা মিজানুর রহমান। রুমকি বেগমের বাড়ি নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলায়। তিনি কৈমারী ইউনিয়নের আশরাফ আলীর মেয়ে। রুমকি তিন ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট।

কৈমারী ইউনিয়নের বিন্যাকুড়ি গ্রামে এখন শোকের ছায়া।

রুমকির মেজো ভাই ও বিন্যাকুড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রওশন আলী রনি জানান, ১৭ মার্চ মোবাইলফোনে ছোট বোন রুমকির সঙ্গে তার কথা হয়। সে বলেছিল, ঈদুল ফিতরের ছুটিতে বেড়াতে আসবে। কিন্তু, তা আর হলো না; এই কথা বলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।

রুমকির খালু শফিকুল ইসলাম জানান, সাড়ে তিন বছর আগে তার ভাতিজির বিয়ে হয়। গত চারদিন আগে মেয়ে জামাই এলাকায় বেড়াতে আসে। আর চারদিন পর তার মৃত্যুর খবর শুনতে হলো।

বোনকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ বড় ভাই রফিকুল ইসলাম রকি (৩৫)।

বাবা আশরাফ আলী বুকের ধন মেয়ে ও জামাইকে হারিয়ে দিশেহারা। পাঁচ মাস আগে রুমকির মা মারা যান।

রুমকির চাচাতো বোন জয়া বেগম (৪২) বলেন, ‘রুমকির শিক্ষাজীবন ও বিবাহিত জীবন ঢাকায়। ট্রাভেল এজেন্সিতে  স্বামী-স্ত্রী দুজনই চাকরি করতো। রুমকি ১০ তলায় আর আমার ভগ্নিপতি ১১ তলায় কর্মরত ছিল। শুনেছি জীবন বাঁচাতে ১১ তলা থেকে লাফ দিতে গিয়ে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। আর রুমকি কালো ধোঁয়া ও গ্যাসে শ্বাসরোধ হয়ে মারা যায়।’

রুমকিদের বাড়িতে শোকনিহতের চাচা ও জলঢাকা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ আলী বলেন, ‘আমার ভাই আশরাফ আলী একমাত্র মেয়েকে হারিয়েছেন। তিনি ঢাকায় গিয়ে তার মেয়ের লাশ বুঝে নিয়েছেন। আর জামাইয়ের বাড়ি যেহেতু ঢাকায়। তার লাশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’

জলঢাকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. সুজাউদৌলা বলেন, ‘নিহতের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছি। জানাজায় অংশ নিয়েছি। রুমকিকে পারিবারিক কবরস্থানে মায়ের পাশে দাফন করা হয়েছে।’

নীলফামারী-৩ আসনের সংসদ সদস্য মেজর (অব.) সোহেল আহমেদ রানা সমবেদনা ও শোক প্রকাশ করেছেন।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুপুর দেড়টার দিকে এফ আর টাওয়ারের ৯ তলায় আগুন লাগে। এতে রুমকি ও মাকসুদুর রহমান দম্পতি নিহত হন। তাদের বাড়ি নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার বিন্ন্যাকুড়ি গ্রামে।

আরও পড়ুন: নিজেদের নিরাপত্তায় আমাদের ৫ করণীয়