পেশা বদল করেও চলছে না জীবনের চাকা

পেশা বদল করে রিকশা চালােচ্ছন অনেকে


হিলি বাজারের একটি হোটেলে কাজ করতেন শফিকুল ইসলাম। পেটের দায়ে এখন রিকশা চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘হোটেলে কাজ করে তিন বেলা খেয়ে প্রতিদিন হাজিরা পেতাম ৫০০ টাকা। তা দিয়ে পরিবার নিয়ে কোনোরকমে চলছিল। করোনার কারণে মার্চ থেকে হোটেলগুলো বন্ধ। দীর্ঘদিন বাড়িতে বসেছিলাম। মাঝখানে একবার প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাল-আলুসহ কিছু পণ্য দিয়ে সহযোগিতা করলেও আর কোনও সহযোগিতা পাইনি। এভাবে আর কতদিন চলবে। কতদিন করোনা থাকবে তারও ঠিক নেই। সংসার তো চালাতে হবে। বাধ্য হয়ে রিকশা চালাচ্ছি। আমার মতো অনেকেই রিকশা চালাচ্ছেন, কেউবা বস্তা সেলাই করছেন। আবার কেউ বেকার বসে আছেন।’

দিনাজপুরের হিলির শফিকুলের মতো অনেকেই করোনার কারণে বেকার হয়েছেন। অনেকে বাধ্য হয়ে ভিন্ন পেশা বেছে নিয়েছেন। তারপরও আয় রোজগার নেই। ফলে এনজিও’র ঋণের কিস্তি পরিশোধসহ সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
পোশাকের দোকানের কর্মচারী রুহুল আমিন বলেন, ‘মার্চ থেকে দোকান বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে বাড়িতে বসেছিলাম। পরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে মালিক দোকান খুললেও বেচাকেনা না থাকায় ৫ কর্মচারীর মধ্যে তিন জনকে বাদ দিয়েছেন। অন্য দোকানেও কাজ পাইনি। তাই বাধ্য হয়ে এখন রিকশা চালাচ্ছি। আমার মতো অনেকেই চাকরি হারিয়ে ভ্যান-রিকশা চালাচ্ছে।’   

পেশা বদল করে রিকশা চালােচ্ছন অনেকে
রিকশাচালক ছক্কু মিয়া ও নাসির হোসেন জানান, করোনার কারণে চরম বিপাকে পড়েছেন। বেশ কিছু দিন তাদের রিকশা চালাতে দেয়নি। ওই সময় শুধু একবার সরকারি ত্রাণ হিসেবে চালসহ কিছু পণ্য দিয়েছে। এখন রিকশা চালাতে পারলেও বাজারে তেমন লোকজন না থাকায় আগের মতো আয় নেই। আগে সারা দিন রিকশা চালিয়ে ৫০০-৬০০ টাকা আয় করতে পারলেও এখন ২০০-২৫০ টাকা আয় করাই দুঃসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটা ভাড়ার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হচ্ছে। সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত দোকান খোলা থাকলেও এর আগেই বাজার ফাঁকা হয়ে যায়। মানুষ না থাকায় আমাদের আয় হয় না।

তারা আরও বলেন, হিলি ইমিগ্রেশন দিয়ে অনেক যাত্রী পারাপার হতো। ওই সময় ভালো ইনকাম হলেও বেশ কিছু দিন ধরে সেটিও বন্ধ রয়েছে। বাইরের জেলাগুলো থেকে মানুষ না আসায় আমাদের তেমন আয় নেই। এতে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এর ওপর এনজিওগুলো কিস্তির জন্য চাপ দিচ্ছে। 

ক্রেতা নেই, তারপরও পণ্য দিয়ে বসে আছেন
হিলি বাজারে ফুটপাতের কাপড় বিক্রেতা মাসুদ রানা বলেন, ‘আমাদের প্রধান ক্রেতা হলো শ্রমিক শ্রেণির মানুষ। কিন্তু করোনার কারণে তাদের কাজ নেই। ফলে আমাদের বেচাকেনা নেই বললেই চলে। আগে প্রতিহাটের দিন তিন হাজার টাকা বেচাকেনা করলেও বর্তমানে ৩০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। কীভাবে কিস্তির টাকা পরিশোধ করবো আর কীভাবে সংসার চালাবো কা নিয়ে চিন্তায় আছি। কিছু করার নেই, বাধ্য হয়ে বসে আছি।’
হাকিমপুর (হিলি) পৌরসভার মেয়র জামিল হোসেন চলন্ত জানান, কর্মহীন লোকজনকে করোনা মহামারির শুরু থেকেই আমরা চালসহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য দিয়ে সহযোগিতা করে আসছি। ঈদে পৌরসভার প্রতিটি বাড়িতে বাড়িতে সেমাই চিনি বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও দিনাজপুর-৬ আসনের এমপি শিবলী সাদিক মানুষকে খাদ্যসহায়তা প্রদান করেছেন। এ ধরনের খাদ্য সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।