জানা যায়, আনিসুর রহমানের চার মেয়ে বৃত্তির টাকা, টিউশনির টাকা এবং বাড়ির জমানো টাকায় এই গরুগুলো কিনে তাদের বাবাকে দিয়েছিলেন। চার-পাঁচ বছর আগে কেনা গরুগুলোর প্রতিটির দাম পড়েছিল ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা করে।
প্রতিদিনের মত মঙ্গলবার রাতে পরিবারের সবাই খাওয়া-দাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়ে। আনিসুরের স্ত্রী আয়েশা বেগম ভোরে নামাজ পড়তে উঠে দেখেন গরুর ঘরে গরু নেই। সঙ্গে সঙ্গে তিনি চিৎকার করতেই আশপাশের লোকজন এসে জড়ো হয়। অনেক খোঁজাখুজি করেও গরুগুলোর আর কোন সন্ধান পাননি তারা।
আনিসুর রহমান জানান, আমার চার মেয়ে বৃত্তি, টিউশনি আর জামানো টাকায় খুব ছোট অবস্থায় গরুগুলো কিনে দিয়েছিল। বড় মেয়ে আফসানা ইসলামী ব্যাংক থেকে মাসে তিন হাজার আর মেজ মেয়ে রোমানা ডাচ বাংলা ব্যাংক থেকে মাসে দুই হাজার টাকা করে শিক্ষাবৃত্তি পায়। সেই টাকার সঙ্গে টিউশনির এবং বাড়ির কিছু টাকা যোগ করে গরু চারটি কেনা হয়। তারপর অনেক কষ্টে লালনপালন করে বড় করেছি। একটি বিদেশি গরুসহ চারটি গরুর বাজার মূল্য প্রায় দুই লাখ টাকা হবে। মেয়েদের স্বপ্ন ছিল গরুগুলো বড় হলে বিক্রি করে যে টাকা আসবে তা দিয়ে তাদের লেখাপড়ার খরচ ও বিয়ের খরচ জোগাড় হবে। কিন্ত সবার সব স্বপ্ন ভেঙে গেছে। মেয়েরা হতভম্ব হয়ে গেছে। দুঃশ্চিন্তায় নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। বিষয়টি আমরা পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবহিত করেছি। পুলিশ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী জানান, ওই পরিবারের চারটি গরু চুরির ঘটনা আমরা তদন্ত করছি। চোর চক্রটিকে ধরার জন্য আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।
উল্লেখ্য, আনিসুর রহমানের চার মেধাবী মেয়ের মধ্যে সবার বড় আফসানা খাতুন এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়ার পর ইংরেজিতে অনার্স সম্পন্ন করেন। মাস্টার্স পড়া অবস্থায় সম্প্রতি তার বিয়ে হয়েছে। মেজ মেয়ে রোমানা আক্তারও এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। তিনি এখন রংপুর মেডিক্যাল কলেজে ডেন্টাল বিভাগে তৃতীয় বর্ষে পড়ছেন। সেজ মেয়ে লাবনী আক্তার এসএসসিতে জিপিএ-৫ এবং এইচএসসিতে জিপিএ-৪ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। তিনি এখন রংপুর আইএইচটিতে রেডিওলোজি নিয়ে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছে। এছাড়া ছোট মেয়ে রিপা আক্তার পঞ্চগড় সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ছে।