জলঢাকা উপজেলার কাঁঠালী ইউনিয়নের উত্তর দেশিবাই গ্রামের আলু চাষি খালেকুজ্জামান বলেন, ‘এবার ৬০ শতাংশ (২ বিঘা) জমিতে আগাম জাতের গেনোলা আলু চাষ করেছি। সেচ, সার, বীজ, আল তৈরি, আলু উত্তোলন ও পরিবহনসহ বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে ১৯-২০ হাজার টাকা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এক বিঘা (৩০ শতাংশ) জমিতে আলু হয়েছে ৩০ মণ। ৬০ টাকা কেজি দরে প্রতিমণ আলু ২ হাজার ৪০০ টাকা হিসাবে বিক্রি করেছি ৭২ হাজার টাকা। এতে আমার খরচ বাদে লাভ হয়েছে (৬০ দিনে) ৫২ হাজার টাকা।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, জেলায় এবার আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২২ হাজার হেক্টর। কৃষি বিভাগ এই জমি থেকে আলু উৎপাদনের আশা করছে পাঁচ লাখ ৩৪ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন। আর এ যাবৎ আগামজাতের আলু উত্তোলন করা হয়েছে দেড় হেক্টর জমি থেকে। আজ পর্যন্ত অর্জিত জমির পরিমাণ ১৩ হাজার ৯৯০ হেক্টর।
এদিকে, কয়েক দফায় ধানের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে ক্ষতি পুশিয়ে নিতে আলু চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক। তারা আগাম ধান কেটে ও উঁচু শ্রেণির জমিতে সাগিতা, গেনোলা ও সাইটা জাতের আলুর চাষ করেছেন।
চলতি বছর বারবার বন্যা ও টানা বৃষ্টির কারণে সবজিসহ অন্যান্য ফসলের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। ওই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে এবার আগাম জাতের আলু চাষ করে লাভের আশা করছেন কৃষক। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আলুর বাম্পার ফলনের আশাও করছেন তারা।
জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার বাহাগিলী ইউনিয়নের কৃষক সফিয়ার রহমান বলেন, ‘এবারে দেড় বিঘা জমিতে আগাম জাতের আলু চাষ করেছি। কিছুদিন আগে এক বিঘা জমির আলু তুলে বিক্রি করেছি। এতে ফলন হয়েছিল ২৬ মণ। প্রতি কেজি আলু ৫৫ টাকা হিসাবে প্রতিমণ দুই হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করেছি। এতে মোট বিক্রি হয়েছে ৫৭ হাজার ২০০ টাকা। খরচ (বিঘায় ১১ হাজার) বাদে লাভ হয়েছে ৪৬ হাজার ২০০ টাকা।’ তিনি বলেন, ‘ধান বা অন্যান্য ফসলের চেয়ে আগামজাতের আলু চাষে প্রচুর লাভবান হওয়া যায়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে।’
জেলা শহরের নিউবাবু পাড়া মহল্লার বাসিন্দা রশিদুল ইসলাম বলেন, ‘শহরের কিচেন মার্কেটে খুচরা বাজারে কার্ডিনাল আলু ২৫-৩০ টাকা, আর পুরাতন দেশি জাতের আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকা কেজি দরে। আর নতুন আলু বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকা।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. ওবায়দুর রহমান মণ্ডল জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় জেলার ছয় উপজেলায় আজ পর্যন্ত ১৩ হাজার ৯৯০ হেক্টর জমিতে আলু লাগিয়েছেন কৃষকরা। বর্তমানে দেড় হেক্টর জমির আলু ঘরে তুলেছেন তারা। এতে গড় ফলন হয়েছে ৯.৫ মেট্রিক টন। মাঠ পর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা আলুর রোগ দমনসহ কৃষকদের সর্বাত্মক সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।