রোগীর মৃত্যুর পর মারধর, হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা বন্ধ

ভুল চিকিৎসায় এক স্কুলছাত্রের মৃত্যুর অভিযোগে গাইবান্ধা সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সকে মারধর ও লাঞ্ছিতের প্রতিবাদে বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। এ কারণে বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে বহির্বিভাগে চিকিৎসকদের দেখা যায়নি। হঠাৎ করে বহির্বিভাগের চিকিৎসাসেবা বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সেবা নিতে আসা দূর-দূরান্তের রোগীরা।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মেহেদী ইকবাল ফোনে বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে হাসপাতালে হাসিব নামে এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে তার স্বজনরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তারা কর্তব্যরত চিকিৎসক সুজন পাল, নার্স স্বপ্নাসহ তিন জনকে মারধর ও লাঞ্ছিত করেন। ভর্তির পর রোগীকে উপযুক্ত চিকিৎসা দেওয়ার পরও তার মৃত্যু ঘটে। অন্যায়ভাবে রোগীর স্বজনরা চিকিৎসক ও নার্সদের মারধর করেছেন। ভুল চিকিৎসা ও অবহেলাসহ চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ থাকলে তারা আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারতেন। কিন্তু তা না করে আইন নিজের হাতে তুলে রোগীর স্বজনরা মারধর করেন। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং জড়িতদের বিচার দাবিতে বহির্বিভাগের চিকিৎসা সেবা বন্ধ রাখার সিন্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনার জড়িতদের বিরুদ্ধে সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। চিকিৎসকদের পক্ষে করা লিখিত অভিযোগে দোষীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়। তবে বহির্বিভাগ ছাড়া হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, ইনডোর বিভাগ ও কোভিট-১৯ ফু-কর্নারসহ সব চিকিৎসা কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। বহির্বিভাগের চিকিৎসা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য চিকিৎসকদের আহ্বান জানানো হয়েছে।’

এদিকে, লিখিত অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহাফুজার রহমান জানান, অভিযোগের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর আগে, গত মঙ্গলবার বিকালে সদর উপজেলার দক্ষিণ গিদারী গ্রামের বকুল মিয়ার ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র হাসিবুর রহমান হাসিবকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন স্বজনরা। তারা জানান, হঠাৎ অসুস্থ বোধ করায় হাসিবকে হাসপাতালে নেওয়ার পর জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. সুজন পাল তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। এরপর হাসিবের শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হলে রাত ৮টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে একটি ইনজেকশন পুশ করেন। এর পরেই নাক-মুখ দিয়ে রক্ত ঝরে মৃত্যু হয় হাসিবের। ভুল চিকিৎসা ও অবহেলার কারণে হাসিবের মৃত্যু হয় অভিযোগ স্বজনদের। এ ঘটনায় চিকিৎসক-নার্সদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হলে বহিরাগত লোকজন এসে তাদের হাসপাতাল থেকে তাড়িয়ে দেয় বলেও অভিযোগ তাদের।