লকডাউনে ক্ষতির মুখে পান চাষিরা

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সারাদেশে চলমান লকডাউনের কারণে দিনাজপুরের হিলিতে পানের ক্রেতা সংকট দেখা দিয়েছে। এতে করে পানের দাম পূর্বের চেয়ে অর্ধেকের নিচে নেমেছে। এদিকে পানের দাম কমায় উৎপাদন খরচ না উঠায় চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন পান চাষিরা।

হিলি বাজারে পান বিক্রি করতে আসা আব্দুস সাত্তার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা পান নিয়ে চাষিরা চরম বিপাকের মধ্যে পড়ে গেছি। আগে পান বিক্রি করতে নিয়ে গেলে পান নিয়ে কাড়াকাড়ি লাগতো আর এখন হাটে পান বিক্রি করতে এসেও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। এরউপর দামও কম। পূর্বে প্রতি ৪০ বিরা পান (পোয়া) ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে তা কমে ২ হাজার ৮শ টাকা আর যে পান একটু ভালো সেটি ৩ হাজার ৫শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। আর নতুন চিকন পানের তো কোন দামই নেই। ৮০ টাকা থেকে শুরু করে ১শ টাকা বা দেড়শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অনেক সময় চাষিরা দাম না পাওয়ায় এসব পান ফেলে দিচ্ছেন। এই পানের কোন মূল্যই নেই। শ্রমিক নিয়ে যে পানের বরজ থেকে পান উঠাচ্ছি পান বিক্রি করে সেই শ্রমিকের বিল দেওয়া যাচ্ছে না, এমন একটা অবস্থা দাঁড়িয়েছে।

অপর পান চাষি শামীম হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমি এক বিঘা জমিতে পানের বরজ করেছি তাতে করে আমার খরচ হয়েছে ৩ লাখ ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। আর বর্তমানে পান বিক্রি করতেছি দেড়শ থেকে দুইশ টাকা। এতে করে আমার তো পানের বরজ করে পুরো লোকসান। শ্রমিক লাগিয়ে বরজ থেকে পান তুলতে মজুরি দিতে হলো ৪শ টাকা আর সেই পান নিয়ে সকালে বাজারে বিক্রি করলাম ২শ থেকে ৩শ টাকা। বাকি টাকা আরও পকেট থেকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। এভাবে আমাদের চলবে কীভাবে। জিনিসপত্র বিক্রি না হলে আমরা চলবো কীভাবে? বর্তমান অবস্থায় ছেলে মেয়ে নিয়ে না খেয়ে মরা ছাড়া উপায় নেই আমাদের।

পান কিনতে আসা পাইকার মিলন হোসেন ও আব্দুল আলিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, পানের দাম কম হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে দেশে লকডাউন চলছে। এর কারণে মানুষজন যেমন বাজার ঘাটে আসতে পারছে না, আর মানুষ যদি বাজারে না আসে তাহলে কীভাবে খাবে? এরউপর অনেকে পানের দোকানপাট খুলতে পারছে না। এজন্য পানের চাহিদা না থাকায় দাম কমছে। তাছাড়া এসব পান দেশের বিভিন্নস্থানে সরবরাহ হতো। গাড়ি বন্ধ থাকায় পাইকার যেমন আসতে পারছে না তেমনি এসব পান পাঠানো যাচ্ছে না। এছাড়া এখন সব পানের বরজে নতুন পান উঠতেছে। এতে করে পানের দাম দিন দিন কমতির দিকে। আর এসময় নতুন পানের দাম কিছুটা কম থাকে।

হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূর-এ আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, করোনা সংক্রমণ রোধে চলমান লকডাউনের মাঝে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক পানের দোকান বন্ধ থাকার কথা। তারপরেও পান যেহেতু কাঁচাপণ্য সেহেতু মানবিক দিক বিবেচনা করে আমরা সেদিকে নজর দিচ্ছি না। তারা চালাচ্ছে ঠিক আছে তবে সেটি অবশ্যই স্বাস্থ্য বিধি মেনে ও বিকেল ৩টার মধ্যে সবকিছু যেন তারা বন্ধ করে দেয় এটি নিশ্চিত করতে হবে।