দেশের উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বিশেষায়িত চিকিৎসা কেন্দ্র রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের আইসিইউ ইউনিটের ১০টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের (এসি) ৯টিই অকেজো হয়ে পড়ে আছে। এসির পরিবর্তে সেখানে কোনও সিলিং ফ্যান বা অন্য কোনও বিকল্প ব্যবস্থাও করেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফলে প্রচণ্ড গরমে আগুনে দগ্ধ রোগীদের দুর্ভোগের সীমা নেই। এ অবস্থায় অনেকেই আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের জুলাইয়ে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সর্ব প্রথম চালু হয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ। বিশেষায়িত এ বিভাগ প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই উত্তরাঞ্চলের দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে রোগীদের পাশে বসে হাতপাখা দিয়ে প্রতিনিয়ত বাতাস করে চলেছেন স্বজনরা। কেউ কেউ নিজেরাই বাসা থেকে ছোট টেবিল ফ্যান রোগীর শয্যার পাশে রেখে বাতাসের ব্যবস্থা করেছেন। এই আইসিইউ বিভাগে ১৪টি শয্যায় দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসা নিতে দেখা যায়।
নীলফামারীর জলঢাকা থেকে আসা রোগীর স্বজন আনোয়ার হোসেন জানান, তার স্ত্রী রান্না করতে গিয়ে গ্যাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণে মারাত্মক দগ্ধ হয়ে বার্ন ইউনিটে ভর্তি আছেন সাত দিন ধরে। তাকে আইসিইউ বিভাগে নেওয়া হয়েছে, কিন্তু সেখানকার সবগুলো এসি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় প্রচণ্ড গরমে তার স্ত্রী আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বাধ্য হয়ে বাজার থেকে ছোট স্ট্যান্ড ফ্যান কিনে এনে বাতাস দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন তিনি।
গাইবান্ধার পলাশবাড়ি থেকে আসা দিনমজুর সাহেব আলী জানান, তার মেয়ে রান্না করতে গিয়ে অসাবধানতাবশত ভাতের মাড় শরীরে পড়ে ফেলে দেন। কিন্তু অসহনীয় অবস্থায় বদ্ধ ঘরে এসি নেই, পাখা কিনে বাতাস দিতে হচ্ছে তাকে। তিনি বলেন, এত বড় হাসপাতালের সব এসি নষ্ট, অথচ সচল করার কোনও উদ্যেগ নেওয়া হচ্ছে না।
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর একরামুলের পিঠ পুড়ে গেছে। একপাশ হয়ে শুয়ে থাকতে হয়। একরামুল বলেন, হাসপাতালের বদ্ধ কক্ষের ভেতর বাতাসও গরম। ঘাম আর রোগীদের পোড়া অংশ থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
দিনাজপুরের বীরগঞ্জের শিলা রানী নামের (৬০) এক নারী আড়াই মাস ধরে এখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। দগ্ধ হওয়া দুই পায়ে ব্যান্ডেজ নিয়ে শুয়ে আছেন। সঙ্গে থাকা তার ছেলে কলেজ শিক্ষার্থী শিপন সাহা বলেন, ‘এসি নষ্ট থাকায় এই গরমে বেকায়দায় পড়ে একেবারে কাহিল অবস্থা। কেননা, এটি একদম বদ্ধ ঘর। এভাবে চিকিৎসার নামে রোগীদের মেরে ফেলার কাজ করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।’
বার্ন ইউনিটের দায়িত্বে নিয়োজিত চিকিৎসক ডা. এম এ হামিদ বলেন, একটু সার্ভিসিং করলেই যন্ত্রগুলো ঠিক হয়ে যায়। তিনি জানান, হাসপাতালের পরিচালককে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. রেজাউল করিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এসিগুলো ঠিক হয়ে যাবে। কবে নাগাদ ঠিক হবে, জানতে চাইলে বলেন, খুব অল্প সময়ের মধ্যে। অল্প সময়টা ছয় মাসের মধ্যেও কেন হলো না, এমন প্রশ্নের কোনও সদুত্তোর তিনি দিতে পারেননি। এমনকি বার্ন ইউনিটে কখনও গিয়েছেন কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যস্ততার কারণে যাওয়া হয়নি।