শেষ দিনেও ক্যাম্পাসে যাননি ভিসি কলিমউল্লাহ, শিক্ষার্থীদের মিষ্টি বিতরণ 

শেষ কর্মদিবসেও ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত ছিলেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ। তার বিদায়ের দিনে ক্যাম্পাসে মিষ্টি বিতরণ, আতশবাজিসহ আগরবাতি প্রজ্বলন করেছেন শিক্ষার্থীরা।

রবিবার (১৩ জুন) ছিল উপাচার্য কলিমউল্লাহর শেষ কর্মদিবস। এদিন চার বছর মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে তার। মেয়াদ বর্ধিত না হওয়ায় তাকে বিদায় নিতে হয়। এ উপলক্ষে রাত ৮টায় ক্যাম্পাসে মিষ্টি বিতরণ, আতশবাজিসহ আগরবাতি প্রজ্বলন করেন শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে আনন্দ উদযাপন করেন তারা।

তবে রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতরের সহকারী পরিচালক এহতেরামুল হক স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিদায়ী উপাচার্য কলিমউল্লাহ তার চার বছর মেয়াদকালে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। একই সঙ্গে সবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন বিদায়ী উপাচার্য।

শিক্ষার্থীরা জানান, গত চার বছর উপাচার্য কলিমউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়কে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন। দুই-তিন বছরের সেশনজটে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। বিদায়ের দিনে তার প্রতি ঘৃণা জানাতে আতশবাজি ও মিষ্টি বিতরণ করেছেন তারা।

এদিকে উপাচার্য কলিমউল্লাহ সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৩টায় অনলাইনে ক্লাস নিয়ে নজির স্থাপন করেছেন বলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন।

প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা কাজ করার দাবি, দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকা, একাই ২৬টি কোর্সের দায়িত্ব নেওয়া, হিন্দি গানে ড্যান্স, অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ ও সর্বশেষ শিক্ষামন্ত্রীকে নিয়ে উদ্ভট মন্তব্য করে বিতর্কের জন্ম দেন কলিমউল্লাহ। কিন্তু তার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ, ক্যাম্পাসে না থেকে ঢাকায় বসে লিয়াজোঁ অফিসের নামে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন কার্যক্রম চালাতেন তিনি।

বেরোবি শিক্ষার্থীদের মিষ্টি বিতরণ

এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ ও ক্যাম্পাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলন হলেও তিনি কর্ণপাত না করে লিয়াজোঁ অফিসে কার্যক্রম চালাতেন।

তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, লিয়াজোঁ অফিসে বসে নিয়োগ বাণিজ্য চালাতেন, সিন্ডিকেট মিটিং ক্যাম্পাসে না করে লাখ লাখ টাকা ব্যয় দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন, ফাউন্ডেশন ট্রেনিংয়ের নামে নিয়োগকৃত শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাছ থেকে ব্যবসা করতেন, তার পছন্দের দোকান থেকে দামি পোশাক কেনা, তার লিখিত বই উচ্চমূল্যে কেনা; এমনি পছন্দের সেলুন থেকে নির্দিষ্ট মাপে উচ্চমূল্যে চুল কাটাতে হতে ফাউন্ডেশন ট্রেনিংয়ে অংশগ্রহণকারীদের। যা সবার জন্য বাধ্যতামূলক ছিল।

এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু পরিষদ ও অধিকার সুরক্ষা পরিষদ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ দেয়। যার তদন্ত শেষ করেছে ইউজিসির গঠিত তদন্ত কমিটি।

এরই মধ্যে উপাচার্যকে ক্যাম্পাসে না পেয়ে অধিকার সুরক্ষা পরিষদ ক্যাম্পাসে হাজিরা খাতা টানিয়ে দিয়েছিল। সর্বশেষ ১ জুন ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের ভেতরে পুনরায় হাজিরা খাতা টানিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে উপাচার্যের হাজিরা নিয়ে মূল্যায়নে বলা হয়েছিল, ‘ডিসকোয়ালিফাইড’ এবং সুপারিশ করা ছিল দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।

এই হাজিরা খাতায় উল্লেখ করা হয়, ৩১ মে পর্যন্ত উপাচার্য হিসেবে ক্যাম্পাসে উপস্থিত ছিলেন মাত্র ২৪০ দিন। তার মোট কার্যকাল ১ হাজার ৪৬০ দিনের মধ্যে অনুপস্থিতি ছিল ১ হাজার ২২০ দিন।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকার সুরক্ষা পরিষদের আহ্বায়ক ড. মতিউর রহমান বলেন, যোগদানের পর থেকেই নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন কলিমউল্লাহ। শেষ দিনেও ক্যাম্পাসে এলেন না। আইন-কানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজের মতো করে বিদায় নিলেন। দায়িত্ব হস্তান্তর পর্যন্ত করলেন না। এটি একটি খারাপ উদাহরণ হয়ে থাকবে।

বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান বলেন, উপাচার্য কলিমউল্লাহর বিদায় আমাদের ব্যথিত করেনি বরং অনেক আনন্দ দিয়েছে। এখন আমাদের একটাই চাওয়া, তার সব অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্ত করে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচার শুরু করা। 

এসব বিষয়ে জানতে উপাচার্য কলিমউল্লাহর মোবাইল নম্বরে অর্ধশতবার ফোন দিলেও রিসিভ করেননি। এমনকি একাধিকবার মেসেজ দিলেও উত্তর দেননি।