নীলফামারীর পশুর হাটে উপচেপড়া ভিড়

করোনা সংক্রমণরোধে জারি করা কঠোর লকডাউন উপেক্ষা করে নীলফামারীর ছয় উপজেলায় পশুর হাট বসছে। স্বাস্থ্যবিধি মানছে না হাটে আসা ক্রেতা-বিক্রেতারা। এসব হাটে ভিড় করছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।

রবিবার (১১ জুলাই) বিকাল ৩টা পর্যন্ত জেলা শহরের মশিউর রহমান ডিগ্রি কলেজ মাঠে, জলঢাকায় ও উপজেলার টেংগনমারীর পশুর হাটে বেচাকেনা চলে। এসব হাটে স্বাস্থ্যবিধি না মানায় কাউকে জরিমানা করা হয়নি।

তবে বিভিন্ন এলাকায় রাস্তায় ঘোরাঘুরি ও অটোরিকশার যাত্রীসহ মোটরসাইকেল চালকদের জরিমানা করা হয়। জেলা সদরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভুমি) মো. মফিজুর রহমান তাদেরকে জরিমানা করেন। এতে সহযোগিতা করেন পুলিশ ও সেনা সদস্যরা।

কালিতলা হাটে সরেজিমন দেখা যায়, রবিবার সকাল ৮টা থেকে গরু নিয়ে হাটে আসতে শুরু করেন বিক্রেতারা। পাশাপাশি ক্রেতার ঢলও ছিল চোখে পড়ার মতো। হাটে আসা বেশিরভাগ মানুষের মুখে মাস্ক ছিল না।

হাটে ক্রেতা-বিক্রেতার উপচেপড়া ভিড়

এছাড়া গত শুক্রবার ডোমার উপজেলায় আমবাড়ীতে পশুর হাট বসে। শনিবার (১০ জুলাই) বসে জলঢাকা উপজেলার মীরগঞ্জ হাট। এসব হাটে স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই ছিল না।

আজ দুপুর ১২টার দিকে ওই হাটে আসা ক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এই হাটের পরে আর একটা পাবো। তাই আজকে গরুর বাজার দেখতে এসেছি। সুযোগমতো পেলে আজকে কিনে নিয়ে যাবো।;

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বেশিরভাগ মানুষের মুখে মাস্ক তো নেই। সামাজিক দূরত্বও কেউ মানছে না। এদিকে, ছাগলের হাটেও ছিল প্রচুর সমাগম। ক্রেতা-বিক্রেতা একাকার। নেই হাত ধোয়ার ব্যবস্থা।’

জেলা শহরের বড় বাজারের গরু বিক্রেতা মোসফিকুর বলেন, ‘লকডাউনে হাট বন্ধ থাকার কথা। কিন্তু বিভিন্ন মাধ্যম জানতে পারি আজকে হাট বসবে, তাই গরু নিয়ে হাটে এসেছি। হাটের ইজারাদার জানায় হাট বসার প্রজ্ঞাপন পেয়েছি। ডিসি স্যারকে বলে হাট বসানো হয়েছে, এমন আশ্বাসে আমরা হাটে এসেছি।’

জেলা সদরের রামনগর ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের সফিয়ার রহমান বলেন, ‘আরতো দিন নেই। আজকে সুযোগ পেয়ে হাটে এসেছি গরু কিনতে। করোনার সময়ও গরু-ছাগলের অনেক দাম। তা আগামী হাটে কিনবো। শত শত মানুষ মাস্ক ছাড়াই হাটে প্রবেশ করেছে। কোথায়ও কোনও বাধা দেখলাম না। মুখে পান থাকায় মাস্কটি খুলে রেখেছি।’

স্বাস্থ্যবিধি মানছে না হাটে আসা ক্রেতা-বিক্রেতারা

এ ব্যাপারে কালিতলা হাটের ইজারাদার মাহবুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ডিসি অফিস থেকে কাগজ পেয়েছি। সেখানে কিছু শর্ত দেয়া হয়েছে হাট বসানোর ক্ষেত্রে। আমরা সেগুলো মেনে হাট বসিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এক বছরের জন্য এক কোটি ৫০ লাখ টাকা দিয়ে হাট ডেকেছি। গতবারও ৪২ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। সরকারিভাবে ইজারাদারদের ভূর্তকি দেওয়ার কথা ছিল। সে টাকা এখনও পাইনি। তাহলে লোকসানের টাকা আমাকে কে দেবে?’

গরু-ছাগলের রশিদমূল্যের কথা জানতে চাইলে মাহবুল ইসলাম বলেন, ‘গরুর ক্ষেত্রে ক্রেতার কাছ থেকে ৫০০ টাকা ও বিক্রেতার কাছ থেকে ১০০ টাকাসহ মোট ৬০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। ছাগলের ক্ষেত্রে ক্রেতা ১২০ ও বিক্রেতার কাছ থেকে ৩০ টাকা নেওয়া হচ্ছে।’

কঠোর লকডাউনের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করে আজকে গরুর হাট বসানোর অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। তাদের অভিযোগ, স্বাভাবিক পরিস্থির মতো সেখানে নিয়মিত গরুর হাট বসছে। এতে করে করোনা ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে এলাকার মানুষ।

সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেসমিন নাহার বলেন, ‘মশিউর রহমান ডিগ্রি কলেজের মাঠে হাট বসেছে, এটা কিছুক্ষণ আগে খবর পেয়েছি। এখনই হাট ভেঙে দেওয়া হবে। কিন্ত কাজের কাজ কিছুই হয়নি।’ 

খবর নিয়ে জানা যায়, ওই হাট বেলা তিনটা পর্যন্ত চলে। ইজারাদারের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ইজারাদারকে নিষেধ করা হয়েছে। এরপরও হাট বসার সত্যতা পাওয়া গেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে ‘

জেলা প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘কঠোর লকডাউনে কোথাও গরুর হাট বসানো যাবে না। এরপরও কোথাও গরুর হাট বসানোর অভিযোগ পাওয়া গেলে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছি। মোবাইল কোর্টের মধ্যে তাদের জরিমানা করা হচ্ছে।’