ভারতীয় গরু কেনাবেচার সর্ববৃহৎ হাট দেশিতে ভরপুর

ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে কুড়িগ্রামে পশুর হাটে প্রচুর লোক সমাগম হয়েছে। ক্রেতা-বিক্রেতারা এসেছেন জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে। দাম কিছুটা কম হওয়ায় বিক্রেতারা হতাশ হলেও ক্রেতারা অনেক খুশি। তবে হাটে কাদাপানিতে নাজেহাল হয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। 

যদিও ইজারাদার ও তাদের প্রতিনিধিরা উঁচু স্থানে বসে চালান কাটছেন বলে ভোগান্তি নেই। স্বাস্থ্যবিধির বালাই ছিল না। কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর হাটের শনিবারের (১৭ জুলাই) দৃশ্য এটি।

হাট ঘুরে দেখা যায়, ভারতীয় গরু কেনাবেচার সর্ববৃহৎ হাট হিসেবে পরিচিত ব্রহ্মপুত্র-দুধকুমার নদের মোহনা অববাহিকার এই হাটে এবার ভারতীয় গরু নেই। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কড়াকড়িতে চোরাকারবারিরা গরু পাচার করতে পারেনি বলে জানান গরু ব্যবসায়ী ও হাট সংশ্লিষ্টরা। ফলে এবার ভারতীয় গরু না থাকলেও দেশি গরুতে জমেছে যাত্রাপুর হাট। কিন্তু হাটে গোবর আর কাদাপানিতে ভোগান্তিতে পড়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।

সরেজমিনে দেখা যায়, ভারতীয় গরু রাখার বিশাল শেড দেশি গরুতে ভরপুর হয়ে আছে। শেডের মেঝেতেও কাদা। শেডের উত্তর প্রান্তে হাটের মূল মাঠে প্রচুর দেশি গরু নিয়ে এসেছেন কৃষকরা। মাঠের কোথাও কাদাপানি আবার কোথাও আবর্জনা। মাঠজুড়ে কাদাপানিতে গরু নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন বিক্রেতারা। উপায় না পেয়ে কাদাপানি দাঁড়িয়ে গরুর দরদাম করছেন ক্রেতারা।

কাদাপানিতে প্যান্ট গুটিয়ে গরু কিনে যাওয়ার সময় কথা হয় তাহমিদ নামের এক ক্রেতার সঙ্গে। হাটের পরিবেশ নিয়ে তিনি বলেন, ‘হাটে আসা ভুল হয়েছে। এতো বাজে অবস্থার মুখোমুখি হতে হবে ভাবিনি। হাট কমিটি কী করে বুঝি না, তারা তো চালানে টাকা কম নিচ্ছেন না।’

অসহায়ত্ব প্রকাশ করে গরু বিক্রেতা সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘হামার কী করার আছে, হামাকতো গরু বেচা লাগবে। কাদত খাড়া হয়া থাকি হইলেও বেচা লাগবে।’

তবে স্বাস্থ্যবিধি পালনে ক্রেতা-বিক্রেতার উদাসীনতার দায় নিতে অস্বীকৃতির পাশাপাশি হাটের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের দায়ও নিতে রাজি নন ইজারাদার। 

হাটে কাদাপানিতে নাজেহাল হয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা

ইজারাদারের দাবি, মাস্ক বিতরণ করে ক্রেতা-বিক্রেতাকে পরতে বলা হলেও কেউ পরে না। আর হাটে কাদামাটি নিষ্কাশনে উপজেলা প্রশাসনের ওপর দায় চাপান ইজারাদার।

ক্রেতা-বিক্রেতার ভোগান্তির কথা স্বীকার করে হাটে উপস্থিত ইজারাদারের অংশীদার আকতার হোসেন চিনু বলেন, ‘সকালে বৃষ্টি হওয়ায় হাটে পানি জমেছিল। হাটের পাশে নদী থাকলেও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় কাদা জমে যায়। আমরা পানি নিষ্কাশনের উদ্যোগ নিলেও ড্রেন না থাকায় তা তেমন কাজে দেয়নি।’

হাটের মাঠে মাটি কিংবা বালু দিয়ে সংস্কার করা যেতো কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটি জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ হাট। হাটের রাজস্ব পায় উপজেলা প্রশাসন। প্রশাসনের উচিত হাটের পরিবেশ উন্নয়নে ব্যবস্থা নেওয়া।’

জানতে চাইলে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিলুফা ইয়াছমিন বলেন, ‘ইজারাদার আমাদের কাছে কোনও অভিযোগ করেননি। চাহিদা না দিলে আমরা কীভাবে ব্যবস্থা নেবো। যেহেতু এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ হাট, কী কী সমস্যা আছে; তা জানালে আমরা সমাধান করবো।’