নিজ ঘরে প্রথম ঈদ তাদের

কয়েক দিন আগেও মাথার ওপর ছাউনি ছিল না। তিন বেলা খেতে পারতেন না। রাস্তার পাশে কিংবা অন্যের জায়গায় আশ্রিত ছিলেন। এখন তাদের ঘর হয়েছে, ঘরে চলছে রঙিন টেলিভিশন। মাথার ওপর ঘুরছে ফ্যান। বাড়ির আঙিনায় সবজির বাগান। জীবনে প্রথম এক অন্যরকম পরিবেশে ঈদ উদযাপন করছেন দিনাজপুরের সীমান্তবর্তী এলাকা হিলির আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা।

মুজিববর্ষ উপলক্ষে গত ২০ জুন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে হিলির ১৪৫ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ঘর উপহার দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঘর পেয়ে আনন্দিত এসব পরিবার। নতুন ঘরে নতুন করে জীবন সাজাতে ব্যস্ত তারা। এর সঙ্গে ঈদের আনন্দ যোগ করেছে ভিন্ন মাত্রা।

স্থানীয় সূত্র জানায়, হিলির খট্টামাধবপাড়া, বোয়ালদাড় ও আলিহাট ইউনিয়নে ১৪৫ পরিবারকে জমিসহ পাকা ঘর উপহার দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসব ঘর নিয়ে অভিযোগ নেই উপকারভোগীদের। ঘরে লেগেছে বিদ্যুৎ সংযোগ, চলছে রঙিন টেলিভিশন, ঘুরছে ফ্যান, নিশ্চিত হয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার। এরই মধ্যে তাদের ঘরে শুরু হয়ে গেছে ঈদ আনন্দ।

এমন নতুন জীবনের সন্ধান দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন উপকারভোগীরা। একইসঙ্গে নিজেরাই নিজেদের জীবন সাজানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।  

আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা অজুফা বেওয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগে মানুষের বাসায় থাকতাম। অনেক কষ্ট হতো। এখন সরকার যে বাড়ি দিয়েছে তা অনেক সুন্দর। আমার বাড়ি বলতে পারছি। এই প্রথম মনে হচ্ছে ঈদ। অন্যের বাড়িতে থাকায় কখনও ঈদের আনন্দ বুঝতাম না। ভালোভাবে খাবার পাইনি। এখন সবকিছুর ব্যবস্থা হয়েছে। এই প্রথম নিজ বাড়িতে ছেলেমেয়েকে নিয়ে ঈদ করছি।’

আব্দুর রহিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগে ছিলাম পরের জায়গায়। যার কারণে ছেলেমেয়েকে নিয়ে খুব কষ্টে ছিলাম। সরকার থাকার ঘর দিয়েছে। নিজস্ব ঠিকানা পেয়েছি। নানা ধরনের সহায়তা পাচ্ছি। পাশাপাশি দিনমজুরির কাজ করছি। বাড়িতে গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি লালন-পালন করছে স্ত্রী। ভালোভাবে সংসার চলছে। আগে কখনও ঈদ মনে হয়নি, এবার ঈদ ঈদ লাগছে।’

ঘর পাওয়া বিলকিস বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগে তো থাকার জায়গাই ছিল না; কিসের আবার ঈদ। এখন বাড়িতে হাঁস-মুরগি, কবুতর লালন-পালন করি, সবজি চাষ করছি। এসব থেকে যা আয় হয়, তা দিয়ে নিজেরা চলছি; বিক্রিও করতে পারছি। ছেলেমেয়েকে নিয়ে ভালোভাবেই চলছে নতুন সংসার। শেখের বেটির কাছে কৃতজ্ঞ। আল্লাহ তাকে অনেক দিন বাঁচিয়ে রাখুক। তিনি বেঁচে থাকলে গরিব মানুষ ও দেশের অনেক উপকার হবে।’

হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নূর-এ আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর যে অঙ্গীকার ছিল, একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না; সেটি বাস্তবায়ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন শুধু আশ্রয়কেন্দ্রিক ছিল না, সেটি ছিল অসহায় মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ঘটানো। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে মাঠ প্রশাসন সেই কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই উপজেলার তিন ইউনিয়নে ১৪৫ ঘর উপকারভোগীদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তারা সেই ঘরে বসবাস করছেন।’
ইউএনও আরও বলেন, ‘আগে এই পরিবারগুলোর ঈদ আনন্দ বলে কিছুই ছিল না। নতুন ঘরে গিয়ে তারা প্রথম ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে পারছেন। তাদের প্রত্যেকের হাতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছি। চেষ্টা করছি, তাদের সার্বিক জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাতে। আশা করছি, সামনের ঈদগুলো নিজেরাই রঙিন করে তুলতে সক্ষম হবেন তারা।’