বৃষ্টির আশায় ধুমধাম করে ব্যাঙের বিয়ে!

চারদিকে উলুধ্বনি। আশির্বাদ ও অতিথি আপ্যায়ন চলছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিধি মেনে সব আয়োজন। সিঁদুর দান ও পুরোহিতের মন্ত্র উচ্চারণের সাথে সাথে সাত পাকে বাঁধা বর-কনে। তবে মানুষের বিয়ের মতো সব আয়োজন থাকলেও বর ও কনে আসলে ব্যাঙ।

বর্ষাকালেও বৃষ্টি না হওয়ায় রবিবার (২৫ জুলাই) দিবাগত রাতে দিনাজপুরের রাজবাড়ি হিরাবাগানে এমন বিয়ের আয়োজন করা হয়। স্থানীয়দের বিশ্বাস, ব্যাঙের বিয়ে দিলে বৃষ্টি হয়। তাই গত কয়েক বছর ধরেই এ ধরনের আয়োজন হয়ে আসছেন তারা।

ব্যাঙের বিয়ের আয়োজকদের একজন চন্দনা সরকার। তিনি বলেন, গত কয়েক দিন ধরেই অসহ্য গরম। দেখা নেই বৃষ্টির। তাই আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি। ব্যাঙের বিয়ে দিলে বৃষ্টি হবে। এই আয়োজনে আমাদের বৃষ্টির পাশাপাশি প্রার্থনা ঈশ্বর যাতে করে করোনা মহামারি থেকে আমাদের সবাইকে মুক্ত রাখেন।

বাসন্তী সরকার বলেন, গত কয়েক দিন ধরেই বৃষ্টি নেই। এখন আমন মৌসুম, রোপণের সময়। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে ধানের চারা রোপণ করা যাচ্ছে না। ভগবান যাতে করে বৃষ্টি দেন, আজকেই যাতে বৃষ্টি হয়, এই চাওয়া আমাদের। তাই ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন।

স্থানীয়দের বিশ্বাস, ব্যাঙের বিয়ে দিলে বৃষ্টি হয়

সুমনা অধিকারী বলেন, আমি ব্যাঙের বিয়ের কথা শুনেছি, কিন্তু কখনও দেখিনি। তাই পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে এসেছি। এখানকার সবাই মিলে উদ্যোগ নিয়ে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

ঝুমুর সরকার বলেন, আমি বাবা-দাদাদের মুখে শুনেছি ব্যাঙের বিয়ের কথা। কিন্তু আজকে এই আয়োজনটি দেখলাম। খুব ভালো লাগছে।

বাঁধন সরকার বলেন, বর্ষায় কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি নেই। তাই আমরা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনার জন্য এই আয়োজন করেছি। গত কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি না থাকলেও এমন আয়োজন করছি বিকাল থেকে। এরপর সন্ধ্যায় কিছুটা বৃষ্টির দেখা মিলেছে। আবহাওয়াও অনেকটা ভালো হয়েছে।

সূচনা রায় বলেন, শাস্ত্রবিধি মেনে পুরোহিত এনে ব্যাঙের বিয়ে দিয়েছি। আমাদের বিশ্বাস, এমন আয়োজনে বৃষ্টি হয়। যখনই বৃষ্টির দেখা যায় না তখনই এমন আয়োজন করি এবং আমরা প্রমাণ পেয়েছি। এলাকার সবাই মিলে সহযোগিতার মাধ্যমে এই বিয়ের আয়োজন করা হয়।

শাস্ত্রবিধি মেনে পুরোহিত এনে ব্যাঙের বিয়ে

বিয়ের আয়োজনে পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করেন তপন কুমার গোস্বামী। তিনি বলেন, বেশ কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় এমন আয়োজন। এটা আমাদের লোকাচার। আমরা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি যাতে বৃষ্টি হয় এবং করোনার গ্রাস থেকে সকলে মুক্ত হই।

বিয়ের আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন লোকসংস্কৃতি নিয়ে গবেষণায় নিয়োজিত দিনাজপুর দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গবেষক ড. মাসুদুল হক। তিনি বলেন, উত্তরবঙ্গের লোকসংস্কৃতির কাজ করতে গিয়ে পুথি-পুস্তকে এমন আয়োজনের বিষয়টি আমরা জেনেছি। ঐতিহ্যবাহী যে জনমন্ডল রয়েছে, এই উত্তরবঙ্গে বিশেষ করে সনাতন ধর্মাবলম্বী ও আদিবাসী সমাজ তারা আবহাওয়া-প্রতিবেশের সাথে তন্নিষ্ঠ থেকে দীর্ঘদিন ধরে এমন ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করে থাকে। আজকে আমি অভিভূত হলাম।