২৫ টাকায় আমদানি কাঁচা মরিচ দেশে ঢুকেই ২০০

দীর্ঘ আট মাস বন্ধের পর দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি হয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে আমদানি করা হলেও দেশে ঢুকেই বেড়ে যাচ্ছে কাঁচা মরিচের দাম। ২৫ টাকা কেজিতে আমদানি করা কাঁচা মরিচ দেশের বাজারে ২০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

শনিবার (১৪ আগস্ট) হিলি স্থলবন্দর দিয়ে দুই ট্রাকে ভারত থেকে ২৩ হাজার ৫৬২ কেজি কাঁচা মরিচ আমদানি করা হয়। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন পর এই বন্দর দিয়ে মরিচ আমদানি শুরু হয়। 

বগুড়ার আল মামুন ট্রেডার্স এক ট্রাকে ১২ হাজার ৮৮২ কেজি কাঁচা মরিচ আমদানি করেছে; ভারতের আসামের রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান জমির উদ্দিন রফতানি করেছে। অপর ট্রাকে ১০ হাজার ৬৮০ কেজি কাঁচা মরিচ আমদানি করেছে হিলির খন্দকার এন্ট্রারপ্রাইজ। ভারতের শিপিং লাইন এসব মরিচ রফতানি করেছে। হিলি স্থলবন্দরে এসব কাঁচা মরিচ ৮০-৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রির কথা বললেও পাইকার না থাকায় রাজধানীতে পাঠানো হয়েছে।

দীর্ঘ আট মাস বন্ধের পর দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি

স্থানীয় বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শনিবার হিলির হাটবাজারে ১০০-১১০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে কাঁচা মরিচ। আমদানির পরও দাম না কমায় অসন্তোষ ক্রেতারা।

হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও কাঁচা মরিচ আমদানিকারক হারুন উর রশীদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অতিবৃষ্টির কারণে বাজারে কাঁচা মরিচের সরবরাহ কমে যায়। এতে দাম বেড়ে বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। এমন অবস্থায় বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঁচা মরিচ আমদানির সিদ্ধান্ত হয়।

তিনি বলেন, চলতি মাসের শুরুতেই আইপির জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু নানা কারণে আইপি পেতে দেরি হওয়ায় কাঁচা মরিচ আমদানিতে সময় লেগেছে। ভারতের কানপুর থেকে ৩০০ মার্কিন ডলারে প্রতি টন মরিচ আমদানি করেছি। লোডিং থেকে শুরু করে বন্দরে পৌঁছাতে তিন দিন সময় লেগেছে। কেজি প্রতি ২৫ টাকার মতো পরিবহন খরচ পড়ছে। আমদানিকৃত মরিচ কাস্টমে ৫০০ ডলারে শুল্কায়ন করা হয়। প্রতি কেজিতে পড়ে ২৫ টাকা ৫০ পয়সা। এ ছাড়া পণ্যের ঘাটতি, পচে যাওয়ার বিষয় তো আছেই। সবমিলে বন্দরে নামানো পর্যন্ত কেজিতে খরচ পড়ে ৭৫-৮০ টাকা। বন্দরে পাইকারিতে ৮৫-৯০ টাকা কেজি বিক্রি করা হয়। 

হারুন উর রশীদ আরও বলেন, বন্দরে ৮৫-৯০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও ঢাকায় ১৮০-২০০ টাকা বিক্রি হয় বলে জেনেছি। কেন সেখানে এত দাম তা আমাদের জানা নেই। শুনে আমরাও হতবাক। দামের এত পার্থক্য কেন বুঝতেছি না। আমার কাছে মনে হয় আড়তদার থেকে শুরু করে খুচরা বিক্রেতা পর্যন্ত যত হাত বদল হয়, তারাই কারসাজি করে দাম বাড়িয়ে দেন। যেখানে কেজিতে ৩-৫ টাকা লাভ করার কথা সেখানে মানুষকে জিম্মি করে কয়েক গুণ লাভে বিক্রি করছে তারা। তবে বন্দর দিয়ে কাঁচা মরিচের আমদানি অব্যাহত থাকলে ধীরে ধীরে বাজারে দাম কমবে।

দেশে ঢুকেই বেড়ে যাচ্ছে কাঁচা মরিচের দাম

বন্দরের শ্রমিক আইনুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, হিলি দিয়ে দীর্ঘদিন কাঁচা মরিচ আমদানি হয়নি। আজ প্রথম কাঁচা মরিচ আমদানি হয়েছে। এতে আমাদের কাজ যেমন বেড়েছে তেমনি আগের চেয়ে বাড়তি আয়ের সুযোগ তৈরি হয়েছে।

হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, দেশের বাজারে কাঁচা মরিচের দাম নিয়ন্ত্রণে আমদানি করা হচ্ছে। আজকে বন্দর দিয়ে দুই ট্রাকে ২৩ হাজার ৫৬২ কেজি কাঁচা মরিচ আমদানি হয়েছে। আরও কয়েক ট্রাক দেশে আসার অপেক্ষায় রয়েছে।

তিনি বলেন, বন্দর দিয়ে অন্যান্য পণ্যের পাশাপাশি কাঁচা মরিচ আমদানি শুরু হওয়ায় সরকারের রাজস্ব আয় যেমন বাড়ছে তেমনি বন্দরের আয় বাড়ছে। একই সঙ্গে শ্রমিকদের আয় বেড়েছে। কাঁচা মরিচ যেহেতু কাঁচা পণ্য, গরমে নষ্ট হয়ে যায়। তাই কাস্টমের প্রক্রিয়া শেষে দ্রুত খালাস দেওয়া হবে।