১৫০ বছরেও জানা যায়নি গাছ দুটির পরিচয়

দিনাজপুর সদর উপজেলার গোপালগঞ্জ বাজার। স্থানীয়দের মতে, প্রজাপ্রেমী গোপাল রাজার সম্মানার্থে এই বাজারটির নাম হয়েছে গোপালগঞ্জ বাজার। বাজারের পশ্চিম দিকে তাকালেই দেখা যাবে বিশাল দুটি গাছ। প্রজাতি সম্পর্কে না জানায় কেউ বলে ‘অচিন গাছ’ আর কেউ বলে ‘অচিন্ত’। প্রায় দেড়শ’ বছর বয়সী পাশাপাশি দুটি  গাছের এমনই নাম ছড়িয়ে পড়েছে। দিনাজপুরের সদর উপজেলার গোপালগঞ্জ বাজারের পার্শ্ববর্তী এই দুটি গাছ এখন অনেকের কাছেই রহস্য। উদ্ভিদ বিজ্ঞানের শিক্ষকরা ধারণা করছেন, গাছ দুটি ডুমুর প্রজাতির। স্থানীয়রা বলছেন, এই গাছে ছোট ডুমুর জাতীয় ফল হওয়ার আগে গাছের নিচে ফুলের পাঁপড়ি ঝরে। কিন্তু ডুমুরের তো ফুল হয় না। গবেষণার মাধ্যমে এই গাছের রহস্য উদ্ঘাটন করা গেলে নতুন অনেক তথ্য জানা যাবে বলে করেন তারা।  

Dinajpur Unnamed Tree Photo- (9)গাছ দুটির গোড়ার কাছে গিয়ে দেখলে মনে হবে এগুলো বট বা পাকুড়ের গাছ। এই গাছের ডাল থেকে শিকড় নিচে নেমেছে। তবে শিকড়গুলো শুধু মূল গাছটিকেই পেঁচানো। কিন্তু বট গাছের ডাল থেকে বের হওয়া শিকড়গুলো সবদিকেই থাকে। আবার উপরে তাকালে বটের তুলনায় আরেকটি ভিন্নতা পাওয়া যাবে। গাছের পাতা লম্বাটে, ঠিক ডুমুর গাছের পাতার মতো। আর মোটা ডাল থেকে বের হয়েছে কিছু ছোট ছোট ডালপালা। এসব বৈশিষ্ট্য সাধারণত ডুমুর গাছের মধ্যে থাকে।

স্থানীয়রা জানান, গাছে ছোট ছোট ডুমুর বা পাকুড় গাছের ফলের মতো ফল হয় যার রঙ সাদা। তবে ফল হওয়ার এক-দেড়মাস আগে গাছ থেকে ফুলের পাপড়ি ঝরে নিচে পড়ে। বৈশিষ্ট্যগতভাবে এটি ডুমুর প্রজাতির হতে পারে বলে ধারণা করছেন উদ্ভিদ বিজ্ঞানের শিক্ষকরা। তাদের মতে, ডুমুরের বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে এটি একটি প্রজাতি।

Dinajpur Unnamed Tree Photo- (8)এই গাছের নিচে দোকান করছেন ৬৫ বছর বয়সী ইয়াসিন আলী। তিনি বলেন, ‘আমি ছোট থেকেই এই গাছ দেখছি। ৫০ বছর আগে যেমন ছিল এখনও তেমনই আছে। আমার বাবা-দাদার মুখেও শুনেছি যে তারাও গাছ দুটিকে এমনই দেখে আসছেন। এই ধারণা থেকে বলা যায়, গাছ দুটির বয়স কমপক্ষে দেড়শ’ বছর। তবে এটি কী গাছ তা আমরা কেউ জানি না, তাই অচিন্ত গাছ বলেই ডাকি।’

এলাকার শাহরিয়ার সুমন বলেন, ‘আমি জানি গাছটির নাম অচিন গাছ। কেউ গাছটিকে না চেনায় এই নাম হয়েছে। গাছ দুটিতে বছরে দুবার পাতা ঝরে এবং একবার ফল হয়। ফলটি সাদা, কিছুটা পাকুড় গাছের ফলের মতো।’

উদ্ভিদবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করা দিনাজপুর সারদেশ্বরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, ‘আমরা চাই, এই গাছের প্রজাতি সম্পর্কে জানতে জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক উদ্ভিদ গবেষকরা গবেষণা করবেন। এই গাছের রহস্যভেদের মাধ্যমে আমরা দুর্লভ কিছু তথ্য পেয়ে যেতে পারি।’

Dinajpur Unnamed Tree Photo- (12)দিনাজপুর সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘গাছের বৈশিষ্ট্য দেখে মনে হচ্ছে, এটি ডুমুর প্রজাতির। বই-পুস্তকে জানা যায়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ায় সাদা ডুমুর বা হোয়াইট ফিগ নামে গাছ রয়েছে। এটি ডুমুরের একটি প্রজাতি। তবে এই গাছ বাংলাদেশ ও ভারত অঞ্চলে দেখা যায় না। জেলায় থাকা গাছের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী সাদা ডুমুর ধারণা করা হলেও পাপড়ি ঝরার বিষয়টি ভিন্ন। কারণ ডুমুর এমন একটি ফল যার ফুল বা ফুলের রেণু মোটা আবরণ দিয়ে ঢাকা থাকে অর্থাৎ ফলের ভেতরে থাকে। কিন্তু ফল হওয়ার আগে এই গাছটির পাপড়ি ঝরায় মনে হচ্ছে এটির পাপড়ি মুক্ত, শুধুমাত্র রেণু ভেতরে থাকে। আবার গাছে লতা বা লতার মতো শিকড় বিদ্যমান, কিন্তু ডুমুর গাছে এমন লতা দেখা যায় না। আসলে এই গাছের বিষয়ে আমরা এখনও বিশেষভাবে বলার মতো কিছু উদ্ঘাটন করতে পারিনি। তবে এটা সত্য, গাছ দুটি বিরল প্রজাতির। এই গাছ সম্পর্কে জানতে বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে এবং মাঝে মাঝেই এলাকায় গিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হয়। এ বিষয়ে সময় নিয়ে বিস্তর গবেষণা করার পরই বলা যাবে এটি কোন প্রজাতির।’