ইয়াসমিন হত্যার ২৬ বছর, আজও থামেনি মায়ের কান্না

আজ ইয়াসমিন ট্র্যাজেডি দিবস। ১৯৯৫ সালের ২৪ আগস্ট কতিপয় পুলিশ সদস্য কর্তৃক ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয় কিশোরী ইয়াসমিন। এর প্রতিবাদে আন্দোলনে নামলে জনতার উপর গুলি চালায় পুলিশ। গুলিতে নিহত হন সাত জন। আহত হন অনেকে। সেই থেকে দিনটি ‘নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে পালন হয়ে আসছে।

দীর্ঘদিন পর মাকে দেখার জন্য সেদিন আকুল হয়ে ঢাকা থেকে দিনাজপুরে নিজের বাড়ি ফিরছিলো কিশোরী ইয়াসমিন। কিন্তু দিনাজপুরের কোচে উঠতে না পেরে পঞ্চগড়গামী একটি কোচে ওঠে। পরে কোচের লোকজন তাকে দশমাইল নামক স্থানে নামিয়ে দিয়ে সেখানকার চায়ের দোকানে জিম্মায় দেয়। ওই চায়ের দোকানে একটি পুলিশের ভ্যান এসে কিশোরী ইয়াসমিনকে নিয়ে যায়। পুলিশ সদস্যরা তাকে নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে। কিন্তু পথিমধ্যে ভ্যানের ভেতরেই ইয়াসমিনকে ধর্ষণের পর হত্যা করে পুলিশ সদস্যরা। হত্যার পর লাশ রাস্তার পাশে ফেলে পালিয়ে যায়। 

ভ্যানে রাখা ইয়াসমিনের লাশ

ঘটনার পর দিন লাশ পেয়ে প্রথমে দশমাইল এলাকায় প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। পরে তা ধীরে ধীরে আন্দোলনে রূপ নেয়। পুলিশের এই বর্বোরোচিত ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে দিনাজপুরবাসী বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ক্ষুব্ধ জনতাকে দমাতে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। পুলিশের গুলিতে নিহত হন সামু, সিরাজ ও কাদেরসহ সাত জন নিহত হন। আহত হন তিন শতাধিক মানুষ। পরে আন্দোলনের মুখে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় জড়িত তিন পুলিশ সদস্যদের ফাঁসির রায় হয় ১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট। ২০০৪ সালে সেপ্টেম্বরে তাদের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়।

ঘটনার পর থেকে নানা আয়োজনে ২৪ আগস্ট ‘জাতীয় নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে এবারও দিনাজপুর শহরের বিভিন্ন ভবন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কালো পতাকা উত্তোলন, কালো ব্যাচ ধারণ ও শোক র্যালিসহ বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে।

দশমাইল এলাকায় নির্মিত ইয়াসমিনের স্মৃতিস্তম্ভ

ইয়াসমিন হত্যার ঘটনার ২৬ বছর পেরিয়ে গেছে। তবে একমাত্র মেয়েকে হারানোর বেদনায় আজও কান্না থামেনি মা শরিফা বেগমের।

তিনি বলেন, ‘সেদিন একজনের মারফত সংবাদ পাই, দশমাইলে এক কাজের মেয়েকে পুলিশ মেরে ফেলেছে। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি সে আমার ইয়াসমিন। আমার মেয়ের জন্য যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের জন্য আমি দোয়া করি। আমার মেয়ের জন্য যারা আন্দোলন করেছেন তাদের সবার জন্যই আমি দোয়া করি।’

দিনাজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল বলেন, ওই সময় আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছিলেন সাংবাদিকরা। বিএনপির সময় মামলাটি লড়েছিলেন বাংলাদেশ সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট এম. আব্দুর রহিম। তবে সে সময় তৎকালীন সরকার যে ৮ দফা চুক্তি করেছিল, তা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি।