‘তিস্তা নদী হামার সবকিছু খেয়া ফেলাইছে’

‘তিস্তা নদী হামার সবকিছু খেয়া ফেলাইছে। বাঁধের ওপর কোনোরকমে ছাওনি ঘর বানে (বানিয়ে) দিন কাটাইছি। এইবার সেটাও ভেঙে গেলো। এলা থাকমো কোনঠে (কোথায়)।’

কথাগুলো বলছিলেন তিস্তা নদীর ভাঙনে নিঃস্ব নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের স্পার বাঁধ এলাকার বাসিন্দা শামসুল ইসলাম (৫৬)। তার মতো হাজারও মানুষ তিস্তার ভাঙনে দুর্ভোগে পড়েছেন। ঘরবাড়ি ও ফসলি জমিয়ে হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন অনেকে।

ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের ভেন্ডাবাড়িতে তিস্তার নদীর স্পার বাঁধ ভাঙনের মুখে পড়ছে। ডান তীর বাঁধের নিয়ন্ত্রক এই স্পার বাঁধটি রক্ষায় গতকাল রবিবার সকাল থেকে বালুর বস্তা ফেলেও কোনও লাভ হয়নি। রাতে বাঁধটির প্রায় ২০০ মিটার ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এর ফলে উপজেলার ভেন্ডাবাড়ি এলাকার আড়াই হাজার পরিবার হুমকির মুখে পড়েছে।

স্পার বাঁধ এলাকার বাসিন্দা কুতুব আলী (৪৫) বলেন, ‘আমার পাঁচ জনের সংসার। দীর্ঘদিন ধরে স্পার বাঁধে ছোট ঝুপড়ি ঘরে কোনোরকমে ছেলেমেয়ে নিয়ে দিন কাটাইতাম। সেটাও সর্বনাশা তিস্তা খেয়ে ফেলেছে। গত তিন দফায় তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেলে ভাঙন শুরু হয়। সর্বশেষ স্পার বাঁধটি ভেঙে যাওয়ায় গতকাল সকালে বাড়িঘর সরে নিয়েছিলাম। এখন আর মাথা গোঁজারও ঠাঁই নেই।’

তিস্তা তীরের বাসিন্দা গোলাম রব্বানী বাবু (৫৬) বলেন, ‘স্পার বাঁধটির মাঝ অংশ হুমকিতে ছিল। সেখানে বালুর বস্তা ফেলে রক্ষা করা হয়। কিন্তু এবার শেষ অংশ ফের হুমকির মুখে পড়ে। প্রায় ৫০০ বালুর বস্তা ফেলেও মধ্যরাতে ধসে পড়ে। বাঁধ থেকে আড়াইশ মিটার দূরে আশ্রয়ণ প্রকল্প। সেখানে ৩৯টি পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে।’

বালুর বস্তা ফেলেও কোনও লাভ হচ্ছে না, বাড়ছে ভাঙন

উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান বলেন, এই এলাকার শতাধিক বাড়ি ঘর বারবার তিস্তার পানি বাড়া-কমায় বিড়ম্বনায় পড়েছে। হুমকির মধ্যে রয়েছে ভেন্ডাবাড়ি ও ছাতুনামার চরের হাজার হাজার বানভাসি পরিবার।

তিনি আরও বলেন, ভেন্ডাবাড়ি চরের দুই নম্বর স্পার বাঁধটি রক্ষায় কয়েক দিন থেকে কাজ করেছিলো এলাকাবাসী। গত রবিবার রাতে পানির তোড়ে আবার ভেঙে গিয়ে কিছু অংশ প্লাবিত হয়েছে।

এদিকে ডিমলা ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার। সোমবার (৩০ আগস্ট) দুপুর ১২টায় ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পানি পরিমাপক মো. নুরুল ইসলাম এ তথ্য জানান।

আজ সকাল ৬টায় ৫২ দশমিক ৩০, সকাল ৯টায় ৫২ দশমিক ২৮ ও দুপুর ১২টায় বিপৎসীমার (৫২.২৫ সেন্টিমিটার) ৩৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে তিস্তার পানি প্রবাহিত হয়েছে।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদৌলা প্রিন্স জানান, তিস্তার পানি কমলে ভাঙন বাড়ে। আজ দুপুর ১২টায় বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হলেও তিস্তার ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এতে ডান তীরের স্পার বাঁধটির ২০০ মিটার ধসে পড়েছে। বালুর বস্তা দিয়ে রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হয়েছে।