স্কুল ফিডিংয়ের বিস্কুট পাচ্ছে না শিশু শিক্ষার্থীরা

স্কুল ফিডিং কর্মসূচির উচ্চ পুষ্টিমান সম্পন্ন বিস্কুট পাচ্ছে না নীলফামারী জেলার এক লাখ ৯৫ হাজার ৪৬১ কোমলমতি শিক্ষার্থী। জানা যায়, দেশের দারিদ্র পীড়িত এলাকার ১০৪ উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির হার, শতভাগ উপস্থিতি, ঝরে পড়া রোধ, পুষ্টির অভাব পূরণ, শিক্ষার্থীদের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন ও কিছু বৈদেশিক সহায়তায় ২০১১ সালে স্কুল ফিডিং প্রকল্পটি চালু করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মাধ্যমে শিশু শিক্ষার্থীদের পুষ্টিমান সম্পন্ন বিস্কুট দেওয়া হচ্ছিলো। হঠাৎ চলতি বছরের জুন (২০২১) মাসে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়। বর্তমানে তিন মাস ধরে স্কুল ফিডিং কর্মসূচির উচ্চ পুষ্টিমান সম্পন্ন  বিস্কুট পাচ্ছে না নীলফামারীর পাঁচ উপজেলার এক হাজার ১৪ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক লাখ ৯৫ হাজার ৪৬১ শিশু শিক্ষার্থী। এতে করোনাকালে শিক্ষার্থীদের অপুষ্টিতে ভোগা ও বিদ্যালয় থেকে তাদের ঝরে পড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে শেষ হয়। পরে পরিকল্পনা কমিশন কোনও ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই ৩০ জুন ২০২১ পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি করে। গত ১ জুন একনেক সভায় জাতীয় স্কুলমিল প্রকল্পটির অনুমোদন না দিয়ে পর্যালোচনা করে বাস্তব সম্মত প্রকল্প প্রস্তাবের নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। সে অনুযায়ী প্রকল্প প্রস্তুত করতে এক বছর সময় লেগে যেতে পারে। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দরিদ্র শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে ৭ জুলাই প্রকল্পটির মেয়াদ ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত বর্ধিত করে অনুমোদন দেন। বর্ধিত সময়ের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী নতুন প্রকল্প প্রস্তাবনা প্রস্তুত করে পরিকল্পনা কমিশনের আইএমইডিকে অবহিত করতে বলা হয়।

গত ১৭ আগস্ট (২০২১) পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ সামাজিক বিভাগের শিক্ষা উইং প্রকল্পটি মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নের জন্য অনুমোদন প্রদান করে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনও এক অদৃশ্য কারণে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্প বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। এতে দেশের ১০৪ উপজেলার প্রায় ৩০ লাখ শিক্ষার্থী পুষ্টিমান সম্পন্ন বিস্কুট না পেয়ে অপুষ্টির শিকার হচ্ছে।

এদিকে, আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে বিদ্যালয় খুলে দেওয়ার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাই এই মুহূর্তে শিশুদের খাবারের প্রয়োজন হবে। করোনাকালে বিদ্যালয় বন্ধ থাকার পরও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের পুষ্টির কথা বিবেচনা করে প্রকল্প পরিচালকের নির্দেশনা মোতাবেক শিক্ষক ও এনজিও কর্মীদের মাধ্যমে কয়েক ধাপে শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি বিস্কুট বিতরণ করা হয়।

সূত্র জানায়, প্রকল্পটি মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নের জন্য দেশে ২২টি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ২০১১ সাল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের স্কুল ফিডিং প্রকল্পের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে।

এ বিষয়ে নীলফামারী জেলার বাস্তবায়নকারী সংস্থা আরডিআরএস বাংলাদেশ স্কুল ফিডিং প্রকল্পের সমন্বয়কারী আনন্দ কুমার পাল জানান, ২০১১ সাল হতে আরডিআরএস কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও নীলফামারী জেলার মোট ১৯ টি উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সহযোগিতা করে আসছে। প্রকল্পের দ্বি-পাক্ষিক চুক্তিপত্র অনুযায়ী মেয়াদ শেষ হলে সকল প্রকার মালামাল (ফুড ও ননফুড আইটেম) প্রকল্প পরিচালকের নির্দেশনা মোতাবেক জমা দিতে হবে। জানা যায়, গত ২৬ জুন ২০২১, মহাপরিচালক, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে চিঠি পাঠানো হলে কোনও নির্দেশনা না আসায় এনজিওর ভাড়া করা মালামাল ওয়্যারহাউজে রয়ে গেছে। ওয়্যারহাউজের ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, সিকিউরিটি গার্ডদের বেতন বাবদ মোটা অঙ্কের টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে এনজিওগুলোকে।

এছাড়াও এনজিওদের সঙ্গে প্রকল্পের বর্ধিত মেয়াদের চুক্তিপত্র সম্পাদন না হলেও মাঠ পর্যায়ে সব কর্মকর্তা বিভিন্ন তথ্য সরবরাহসহ অন্যান্য কাজে কর্মস্থলে আছেন। তারা গত জুলাই মাস থেকে বেতন ভাতা না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, প্রকল্পটির উদ্বৃত্ত (অব্যয়িত) প্রায় ৪৭৩ কোটি ৯ লাখ টাকা রয়েছে। শিক্ষার্থীরা যাতে অপুষ্টির শিকার না হয় ও ঝরে না পড়ে তা বিবেচনায় দ্রুত মাঠ পর্যায়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন অভিভাবকসহ প্রাথমিক শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা।