কুড়িগ্রামের চিলমারীতে রমনা রেলস্টেশন চত্বরের একটি শতবর্ষী শিল কড়ই গাছের গোড়ায় আগুন দেখা দিয়েছে। গাছটির ডাল দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে ‘অলৌকিক ঘটনা’ ভেবে হাজারো উৎসুক মানুষ স্টেশন চত্বরে ভিড় জমিয়েছেন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ঘটনাস্থলে পৌঁছে গাছের আগুন নেভানোর চেষ্টা করে।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত রমনা রেলস্টেশন চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। পরে দুপুরে গাছের আগুন নেভাতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস। আগুনে দুর্বল হয়ে গাছের দুটি বড় ডাল ভেঙে পড়ে।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, এটা কোনও অলৌকিক ঘটনা নয়। কেউ কোনোভাবে গাছের গোড়ায় আগুন দিয়ে থাকতে পারে। গাছটির গোড়ায় গর্ত এবং ভেতরে ফাঁপা হওয়ায় সেই আগুন গাছের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে। এটাকে প্রাকৃতিক ভেবে মানুষ ভিড় করছে। তবে আগুনের কারণে গাছটি বর্তমানে অত্যন্ত ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস।
রমনা রেলস্টেশন চত্বরে গিয়ে দেখা গেছে, স্টেশনের রমনা ঘাট প্রান্তে থাকা শিল কড়ই গাছের ডগায় কয়েকটি ডাল দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে। এর গোড়ায় তখনও আগুনের জ্বলন্ত অংশ। উৎসুক জনতা অস্বাভাবিক ঘটনা দেখতে প্ল্যাটফর্মে ভিড় জমিয়েছে।
খবর পেয়ে চিলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সবুজ কুমার বসাকসহ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। আগুনের কারণে গাছটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এর তলদেশ থেকে লোকজনকে সরে যেতে মাইকিং করছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, স্টেশন চত্বরের গাছটি শতবর্ষী। গাছটির গোড়ায় গর্ত এবং ভেতরে ফাঁপা রয়েছে। ভেতরে ফাঁপা অংশে শুকনো রয়েছে। যেভাবে আগুন ও ধোঁয়া বের হচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে কেউ আগুন ধরিয়ে দিয়ে থাকতে পারে।
রমনা ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার নুর আলম বলেন, ‘গাছটি শতবর্ষী। গাছের ভেতরে আগুন জ্বলছে। কীভাবে আগুন লেগেছে, তা আমি নিজেও জানি না। অগণিত জনগণ এখানে জড়ো হয়েছে। কেউ বলছে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে, কেউ বলছে এমনি ধরছে।’
রমনা স্টেশনের পয়েন্টসম্যান মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘মঙ্গলবার ভোরে গাছের ডাল থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখে এর গোড়ায় আগুন দেখতে পাই। আগুন নেভানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হই। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালে তাদের পরামর্শে ফায়ার সার্ভিসে খবর দিই। তারা এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। কীভাবে আগুন লেগেছে সে বিষয়ে আমার ধারণা নেই।’
চিলমারী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের লিডার মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘গাছের গোড়ায় জমে থাকা আবর্জনায় কেউ আগুন লাগিয়ে দিয়ে থাকতে পারে। গাছটি ফাঁপা ও বেশকিছু অংশ শুকনো হওয়ায় আগুন ভেতরে ভেতরে ছড়িয়ে ডালের ফুটো থাকা অংশ দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে। এখানে প্রাকৃতিক কোনও কারণ আমরা পাইনি। আমরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু সব অংশে পানি পৌঁছাচ্ছে না। গাছটি বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ। এটি কেটে ফেলা প্রয়োজন। তা না হলে যেকোনও সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’
স্টেশনের বুকিং সহকারী রায়হান সরকার বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে। গাছটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ গাছটি কেটে ফেলার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট লোকজন পৌঁছালে গাছটি কেটে ফেলা হবে।’