আইন অমান্য করেই গাইবান্ধায় রাস্তার পাশে চলছে করাতকল

গাইবান্ধা

গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন ব্যস্ততম সড়ক ঘেঁষে অবৈধভাবে গড়ে ওঠেছে দুই শতাধিক করাতকল। আইন অমান্য করে গড়ে ওঠা এসব করাতকল গত একছরে উচ্ছেদ হয়নি। এতে যানবাহন ও পথচারীদের চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। অথচ ১৯৯৮ সালের করাতকল (লাইসেন্স) বিধিমালা অনুযায়ী, করাতকল স্থাপনের জন্য বন বিভাগে আবেদন করতে হবে। পৌর এলাকা, জনবসতিপূর্ণ এলাকা ও পরিবেশের ক্ষতি করবে এমন জায়গায় করাতকল স্থাপন করা যাবে না। তারপরও বহাল তবিয়তেই আছে এগুলো।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাইবান্ধার সাত উপজেলার বিভিন্ন সড়ক ঘেঁষে দুই শতাধিক করাতকল রয়েছে। এরমধ্যে গাইবান্ধা-সুন্দরগঞ্জ সড়কের বাঁধের মাথা, চাপাদহ, কুপতলা, লক্ষীপুর, গাইবান্ধা-সাঘাটা সড়কের ত্রিমোহিনী, বাদিয়াখালি, বোনারপাড়া, গাইবান্ধা-সাদুল্লাপুর সড়কের খানকাশরীফ, সাহারবাজার, জয়েনপুর, সাদুল্লাপুর-মাদারগঞ্জ সড়কের পশিচমপাড়া, সাদুল্লপুর-তুলসীঘাট সড়কের পোস্টঅফিস সংলগ্ন ও  গাইবান্ধা-পলাশবাড়ী সড়কের তুলশীঘাট এলাকায় করাতকলের সংখ্যা বেশি।

এছাড়া জেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কের উপরও এসব কল বসানো হয়েছে। অথচ ফাঁকা ও জনশূন্য এলাকায় করাতকল বসানোর নিয়ম। এক শ্রেণির কাঠ ব্যবসায়ী প্রশাসনের অনুমতি না নিয়েই জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এসব করাতকল গড়ে তুলেছেন। বিশেষত জেলা শহরের সাদুল্লাপুর রোড, ব্রিজ রোড, ফলিয়া রোড ও গোডাউন রোডে করাতকলের ব্যবসা এখন জমজমাট। এসব সড়কের উভয়পাশ ঘেঁষে কলগুলো গড়ে ওঠায় নানাবিধ সমস্যা দেখা দিয়েছে।

সাদুল্লাপুর ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক মাহমুদুল হক মিলন বলেন, কাঠের গুঁড়া স্কুল-কলেজগামী ছেলেমেয়েসহ পথচারীদের চোখের মারত্মক ক্ষতি করছে। এছাড়া চেরাইয়ের জন্য আনা বিশাল বিশাল গাছের গুল সড়কের পাশে রাখায় যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

শহরের ব্রিজ রোড এলাকার সমাজকর্মী খাদেমূল ইসলাম বলেন, ‘চালু অবস্থায় করাতকলের গুঁড়া বাতাসে উড়িয়ে বিভিন্ন যানবাহন চালকের চোখে লাগায় দুর্ঘটনা ঘটছে। কিন্তু করাতকল উচ্ছেদে প্রশাসনকে জানিয়েও কাজ হচ্ছে না।’

গাইবান্ধা সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের ব্যবসায়ী মান্নান সরকার বলেন, লক্ষ্মীপুর বাজারের পাশেই গাইবান্ধা-সুন্দরগঞ্জ সড়ক ঘেঁষে বিশাল করাতকল রয়েছে। করাতকল এলাকায় একটি যানবাহন আরেকটি যানবাহনকে অতিক্রম করার সময় গাছের গুঁড়ির সঙ্গে ধাক্কা লেগে দুঘর্টনা ঘটছে।

গাইবান্ধা পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র শাহ মাসুদ জাহাঙ্গীর কবির বলেন, দায়িত্ব পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখব।

 গাইবান্ধা

গাইবান্ধা সদর হাসপাতালের চক্ষু বিশেষজ্ঞ শফিউল আলম প্রধান বলেন, ‘বালুর কণা জাতীয় কাঠের এই গুড়া চোখের রেটিনার মারাত্মক ক্ষতি করে। এতে চোখ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।’

গাইবান্ধা পরিবেশ আন্দোলনের আহ্বায়ক ওয়াজিউর রহমান বলেন, জনগণের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে জেনেও অজ্ঞাত কারণে স্থানীয় প্রশাসন এইসব করাতকল উচ্ছেদে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ফলে দিনের পর দিন গাইবান্ধায় পরিবেশ দূষণের কারণে দেখা দিচ্ছে নানা ধরনের জটিল রোগ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শহরের গাইবান্ধা সদর উপজেলার ত্রিমোহিনী এলাকার কাঠ ব্যবসায়ী ও করাতকল মালিক সালাম মিয়া বলেন, ‘পরিবেশ দূষিত হয় কিনা আমার জানা নেই। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধার জন্য সড়কের পাশে এই ব্যবসা গড়ে তোলা হয়েছে।’

গাইবান্ধা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশরাফুল মমিন খান বলেন, বন বিভাগের কাছে অবৈধ করাতকলের তালিকা চাওয়া হয়েছে। তালিকা পাওয়া গেলে উচ্ছেদের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

  

/এসটি/