হিলির ২১ মন্দিরে চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ

কয়েকদিন পরই শারদীয় দুর্গাপূজা। এ উপলক্ষে দিনাজপুরের হিলিতে মন্দিরে মন্দিরে চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ। গতবার সীমিত পরিসরে হলেও এবার করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় বড় পরিসরে পূজা উদযাপনের আশা করছে কমিটি। গতবারের চেয়ে কাজ বাড়ায় খুশি প্রতিমা তৈরির কারিগররা।

হিলিতে গত বছর ২০ মন্দিরে সীমিত পরিসরে পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এবার ২১ মন্দিরে চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ। ইতোমধ্যে অনেক মন্দিরে প্রতিমা শুকানোর কাজ চলছে। এরপর চলবে রংয়ের কাজ।

প্রতিমা তৈরির কারিগর স্বপন পাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বর্তমানে খড়, মাটি ও পাটের সংমিশ্রণে বিভিন্ন আকৃতির প্রতিমা তৈরি করছি। গত বছর করোনার কারণে কিছুটা ছোট আকারের প্রতিমা তৈরি করেছি। এবার ভক্তদের চাহিদা অনুযায়ী প্রতিমায় আনা হয়েছে ভিন্নতা। আকার হয়েছে বড়। প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন হাতের আঙুলসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক যে কাজ আছে, কয়েকদিনের মধ্যে শেষ হবে। এরপর রংয়ের কাজ হবে। পূজার আগেই সবশেষ করে কমিটির কাছে প্রতিমা বুঝিয়ে দেবো।

তিনি আরও বলেন, আমরা বছরে ৩-৪ মাস প্রতিমা তৈরির কাজ করে যা আয় হয় তা দিয়ে সারা বছর সংসার চলে। গত বছর করোনার কারণে আয় অর্ধেকে নেমেছে। এতে পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছি। এবার করোনা পরিস্থিতি শিথিল হওয়ায় কাজ বেড়েছে। গতবারের চেয়ে বাড়তি আয়ের আশা করছি।

ইতোমধ্যে অনেক মন্দিরে প্রতিমা শুকানোর কাজ চলছে

প্রতিমা তৈরির কারিগর শ্রিদাম পাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমি গত নয় বছর ধরে হিলিতে প্রতিমা তৈরির কাজ করছি। কিন্তু করোনার কারণে আমরা যারা এই পেশায় জড়িত তারা চাহিদা মোতাবেক কাজ না পাওয়ায় উপার্জন কমে দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছি। জীবিকার তাগিদে অনেকে পেশা ছেড়ে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত হয়েছেন। যে প্রতিমা আমরা তৈরি করতাম ৮০ হাজার টাকায়; শুধুমাত্র করোনার কারণে গত বছর সেই প্রতিমার কাজ ৩০ হাজার টাকায় করেছি। আবার যেটি এক লাখ ছিল, সেটি হয়েছে ৪০ হাজার টাকায়। আমাদের মজুরি অর্ধেকও পাইনি। এবারও পরিস্থিতি খুব একটা ভালো নয়। তবে আগের চেয়ে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় কাজের চাহিদা বেড়েছে। আমি ছয়টি প্রতিমা তৈরির কাজ পেয়েছি। তবে প্রতিমা তৈরির স্বাভাবিক সময়ে যে মূল্য পেতাম এবারও সেটি পাচ্ছি না।

হিলির চন্ডিপুর সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক পলাশ কুমার বসাক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গত বছর করোনার সংক্রমণ বেশি থাকায় আমরা অনেকটা ঘরোয়া পরিবেশে দুর্গাপূজা উদযাপন করেছি। এবার করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় ইতোমধ্যে সরকার স্কুল-কলেজ খুলে দিয়েছে। যার কারণে আমরা মনে করছি, এবার ভালোভাবে দুর্গাপূজা উদযাপন করতে পারবো। সরকারি নির্দেশনা ও আমাদের কমিটি যে সিদ্ধান্ত দেয়, সে অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজা উদযাপন করবো। গত বছর প্রতিমার আকার কিছুটা ছোট হলেও এবার বড় আকারের প্রতিমা তৈরি করেছি। করোনার কারণে সবার অর্থনৈতিক সমস্যা আছে। বিষয়টি বিবেচনা করেই পূজা উদযাপন করা হবে।

হাকিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মোস্তাফিজুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, হিলি যেহেতু সীমান্তবর্তী এলাকা সেহেতু সনাতন ধর্মের লোকজন যাতে সুন্দরভাবে পূজা উদযাপন করতে পারে, সে জন্য পুলিশ সব ধরনের ব্যবস্থা নেবে।