হাতে কাজ নেই ঢাক-ঢোলের কারিগরদের

করোনা মহামারির কারণে গত বছর স্বল্প পরিসরে দুর্গাপূজা উদযাপিত হয়। তবে এবার আয়োজনের কমতি নেই। আগামী ১১ অক্টোবর পূজা শুরু হবে। এ উপলক্ষে সারাদেশের মতো নীলফামারীতেও চলছে মণ্ডপ সাজানোর কাজ। তবে পূজার আরতি ও মন্ত্রপাঠের সময় ঢাকের বাজনায় পূজার ভাবগাম্ভীর্য বেড়ে যায়। এতে পরিবেশও হয়ে ওঠে আনন্দময়।

ঢাক তৈরিতে আম, জাম, মাটির হাড়ি ও মেহগনি কাঠসহ ঢাকের ছাউনির চামড়া ও বেড়ী দেওয়ার জন্য মহিষের চামড়া ব্যবহার হয়। এবারে চামড়ার দাম সহনীয় পর্যায় থাকলেও কাঠ ও মাটির হাড়ির দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন এ শিল্পের কারিগররা। সেই সঙ্গে হাতের তেমন কাজও নেই। তাই পেশা ছেড়ে অনেকে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন।

জানা গেছে, ঢাক, ঢোল, দোতারা, তবলা, খোল ও একতারাসহ এসব বাদ্যযন্ত্র এক সময় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, ভুটান ও নেপাল দেশে রফতানি হতো। এখন আধুনিকতার ছোঁয়ায় এসবের কদর হারিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে হাতে কাজ নেই কারিগরদের। তাই অলস সময় পার করছেন তারা।

আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের তোড়ে হারিয়ে যাচ্ছে এসব বাদ্যযন্ত্র

জেলা শহরের গাছবাড়ী এলাকার কারিগর আকাশ চন্দ্র দাস (৩২) বলেন, শুধু পূজার সময় কাজের চাহিদা থাকলেও সারাবছর বসে থাকতে হয়। তাছাড়া এখন ইলেকট্রনিক বাদ্যযন্ত্রের চাহিদা বেড়েছে। অপরদিকে করোনা মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে পথে বসিয়েছে। কাজ না থাকায় সীমিত আয়ে সংসার চালাতে হচ্ছে।

একই এলাকার কারিগর সাগর চন্দ্র দাস (৪২) বলেন, এটা আমার পৈত্রিক পেশা। এই পেশায় ৩৮ বছর ধরে কাজ করছি। আগে একটি ঢোল বিক্রি হতো ছয় থেকে সাত হাজার টাকায়। বর্তমানে এই ঢোল বিক্রি হচ্ছে আড়াই থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত। আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের তোড়ে হারিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় বাদ্যযন্ত্র।  

তিনি বলেন, এ পেশায় সংসারের খরচ চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। পূজা-পার্বনে ছেলেমেয়ের কাপড় ও মিষ্টি কেনার মতো পয়সাও থাকে না। তাই এ কাজের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে অনেকেই। বাপ-দাদার পেশার ঐতিহ্য ধরে রাখতে শুধু কাজটুকু করছি।

স্টেশন রোড ডালপট্টি মহল্লার মানিক চন্দ্র দাস (৪৫) জানান, ছোটবেলা থেকে বাবার কাছে শিখেছি। এখন আর দেশীয় বাদ্যযন্ত্র কেউ নিতে চায় না। বর্তমানে নানা ধরনের আধুনিক বাদ্যযন্ত্র বের হয়েছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় পূজায়ও কাজ না থাকায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। আগের দিনে দুর্গাপূজায় যে আয় হতো তা বেশ কয়েক মাস ভালোভাবে চলে যেতো। এখন যে আয় হয়, তা কোনোরকমে দিন চলে।

নীলফামারী বড় বাজার হাড়োয়া মন্দিরের ঢাকুয়ার হৃদয় চন্দ্র ঋষি বলেন, বছরে একবার দুর্গাপূজায় টাকের বাজনার জন্য বায়না পেয়ে থাকি। বাকি সময় বেকার থাকতে হয়। কিন্তু এবারও তেমন কোনও কাজই পাইনি।

পেশা ছেড়ে অনেকে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন

ওই মণ্ডপের ব্রাহ্মণ মহেষ চন্দ্র রায় বলেন, মায়ের পূজা আনন্দময় করে তুলতে ঢাকের বাজনার বিকল্প নেই। দুর্গতিনাশিনী দুর্গা দেবী অসুরকে পরাজিত করে পৃথিবীতে আসেন শান্তির বাণী নিয়ে। তাই পূজার আনন্দ পরিপূর্ণ করতে ঢাকের বাজনা আবশ্যক। এবার দেবী ঘোড়ায় (ঘোটক) চড়ে আসছে। আর দোলায় (দোলনায়) যাবে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এসব আচার অনুষ্ঠান পালন করা হবে।

সদর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. মঞ্জুর মোর্শেদ তালুকদার জানান, এককভাবে কাউকে সহযোগিতা করার সুযোগ নেই। সমবায় সমিতির মাধ্যমে তাদের আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া যেতে পারে। ওই শিল্পের কারিগরদের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত সমবায় সমিতির আওতায় আনা হবে।