রংপুরের ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের বিচারক না থাকায় চার মাস ধরে আট হাজারের বেশি মামলার বিচারকাজ বন্ধ রয়েছে। এতে জেলার আট উপজেলা ও মহানগরীর সাত থানার মানুষ বিচারবঞ্চিত হচ্ছেন। কবে বিচারক আসবেন, আদালতের কার্যক্রম শুরু হবে; তা জানা নেই কারও।
ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের পেশকার কামরুজ্জামান বলেন, চার মাস ধরে বিচারক নেই। তবে কবে নাগাদ আসবে তা আমাদের জানা নেই।
এদিকে, মামলা জটের কারণে একেক মামলার তারিখ এক বছর পর দেওয়া হচ্ছে বলে বিচারপ্রার্থীরা জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে মামলায় হাজিরা দেওয়া, তারিখ কমিয়ে আনতে ৫০০-১০০০ টাকা পর্যন্ত পেশকার ঘুষ নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিচারপ্রার্থীরা।
বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১২ সালে রংপুরের ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হয়। মূলত জমিজমার রেকর্ড সংশোধন ও বিভিন্ন অভিযোগের বিচারকাজ হয়। জেলার আট উপজেলা ও মহানগরীর সাত থানা এলাকার জমি সংক্রান্ত মামলার বিচারকাজ পরিচালনা করেন সহকারী জজ পদমর্যাদার একজন বিচারক।
বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীরা জানিয়েছেন, বর্তমানে ট্রাইব্যুনালে আট হাজারের বেশি মামলা বিচারাধীন। গড়ে প্রতিদিন ৭০-৮০টি করে মামলার দিন ধার্য থাকে। সেই সঙ্গে নতুন মামলা দায়ের হয়। মামলা হওয়ার তুলনায় নিষ্পত্তি কম বিধায় জট দেখা দিয়েছে।
পীরগঞ্জ উপজেলার মিঠিপুর গ্রামের কমর উদ্দিনের ছেলে আব্দুল হাই অভিযোগ করেন, মামলা করার পর কাজের কাজ কিছুই হয় না। প্রতি তারিখে আইনজীবী, মুহুরি পেশকারকে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা দিতে হয়। গত পাঁচ বছর মামলা চলছে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বছরে একবার করে মামলার তারিখ দেওয়া হয়। প্রতি তারিখে আদালতের পেশকার ৫০০ টাকার নিচে নেন না। তাকে ৫০০ টাকার নিচে দিলে মামলার তারিখ এক বছর পরে দেন। টাকা দিলে ৪-৫ মাস পরে দেন। প্রকাশ্যেই চলছে পেশকার-কর্মচারীদের এই ঘুষ বাণিজ্য।
একই অভিযোগ করেছেন মিঠাপুকুর উপজেলার মিলনপুরের আব্দুল্লাহ। তিনি সাত বছর ধরে আদালতে আসছেন। মামলা নিষ্পত্তির কোনও লক্ষণ দেখছেন না। আদালতের পেশকারের বিরুদ্ধে প্রতি তারিখে ৫০০ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ করেন তিনি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পেশকার কামরুজ্জামান বলেন, সার্ভে আপিল ট্রাইব্যুনালের বিচারক ছিলেন জুলফিকার আলী। তিনি পদোন্নতি পেয়ে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ হয়ে রংপুর আদালতে কর্মরত। গত চার মাসে নতুন বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। বর্তমানে একজন সহকারী জজ অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। তবে তার নিজের আদালতের মামলার বিচার করতে গিয়ে এখানের বিচারকাজ করা সম্ভব হয় না।
তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালে আট হাজারের বেশি মামলা বিচারাধীন। এক বছর পর পর মামলার তারিখ দেওয়া হয় এই কথা সঠিক নয়। প্রতিদিন ৭০-৮০টি মামলার তারিখ থাকে। ৪-৫ মাস পরপর তারিখ দেওয়া হয়। বিচারপ্রার্থীদের কাছ থেকে ৫০০ টাকার নিচে ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি মিথ্যা। এসব আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।
জেলা আইনজীবী সমিতির জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রেজাউল করিম রাজু বলেন, ট্রাইব্যুনালের বিচারক না থাকায় বিচারপ্রার্থীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। মামলার বিচারকাজে দীর্ঘ সময় লাগায় আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটতে পারে। তবে বাদী-বিবাদী ও দুই পক্ষের আইনজীবীরা মামলা নিষ্পত্তিতে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে পারেন। সেই সঙ্গে নতুন বিচারক নিয়োগ দেওয়ার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা নিতে পারেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুল মালেক বলেন, বিষয়টি আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের মাধ্যমে আইন বিভাগের সচিবকে জানানো হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচারক নিয়োগ দেওয়া হবে।