পুঁজি হারানোর আশঙ্কা পান চাষিদের

হিলিতে ক্রেতা সংকটের কারণে দাম না পেয়ে পান বিক্রি করতে না পেরে হতাশ চাষিরা। লাভের আশায় চাষাবাদ করলেও দাম না পেয়ে পুঁজি হারানোর আশঙ্কায় রয়েছেন তারা।
 
স্থানীয় সূত্র জানায়, সীমান্তবর্তী ঘাসুড়িয়া নন্দিপুর ও মাধবপাড়া এলাকার ৩৭ হেক্টর জমিতে ৩৬৫টি পানের বরজ রয়েছে। উপজেলার মধ্যে এই অঞ্চল শুধুমাত্র পান চাষের ওপর নির্ভরশীল। স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন এলাকায় যায় পান।

গত বছর যে প্রতি পোয়া (৪০ বিরা) পানের দাম ছিল তিন হাজার ৬০০ থেকে চার হাজার ২০০ টাকা সেই পান এখন বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে এক হাজার ৪০০ টাকা। চিকন পান ১০০-২০০ টাকা। ক্রেতার অভাবে বিক্রি করতে না পেরে পান ফেলে দিচ্ছেন কেউ কেউ।

পানহাটিতে পান কিনতে আসা পাইকার আনিসুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, পানের দাম অনেক কম। দাম কম হলে আমাদের জন্য সুবিধা হয়। আমরা বেশি করে কিনতে পারি এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাতে পারি। এতে লাভ একটু বেশি হয়।

পান কিনতে আসা আরেক পাইকার আব্দুল মান্নান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, রবিবার ও  বৃহস্পতিবার বাজার বসে এই হাটে। পানের বাজার একটু কম। তবে গত হাটে দাম বেশি ছিল। এ জন্য পান কিনতে পারিনি। আজ দাম কম। এ জন্য বেশি করে কিনেছি। এমন দাম থাকলে পাইকার এবং ক্রেতার জন্য সুবিধা। পানের দাম কমের মূল কারণ বরজে বিভিন্ন রোগ দেখা দিয়েছে। মান একটু খারাপ হওয়ায় চাহিদা কম। এ জন্য দাম কম। 

হিলিতে ক্রেতা সংকটের কারণে দাম না পেয়ে পান বিক্রি করতে না পেরে হতাশ চাষিরা

পান বিক্রি করতে আসা ধরঞ্জয় বর্মন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, পানের বাজার দিন দিন খারাপ হচ্ছে। গত হাটের চেয়ে এই হাটে দাম পোয়া (৪০ বিরা) প্রতি ৪০০-৫০০ টাকা কম। আবহাওয়ার কারণে বরজে পচন ধরায় পান ঝরে পড়ছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়ছি। পানের মান খারাপ হওয়ায় দাম পাচ্ছি না। ভালো পানেরও চাহিদা নেই। ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। একবিঘা জমিতে বরজ করতে দেড় লাখ টাকা খরচ হয়। এখন পান বিক্রি করছি ৭০-৮০ হাজার টাকার। লাভ তো দূরের কথা ৭০-৮০ হাজার টাকা লোকসান।

পান বিক্রেতা চন্দন কুমার ও আশরাফুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, পান চাষ করে খারাপ অবস্থা আমাদের। হাটে বেচাকেনা নেই বললেই চলে। সকাল থেকে পান নিয়ে হাটে ৩-৪ ঘণ্টা বসে থাকলেও বিক্রি হচ্ছে না। বাজারে পান বেশি, ক্রেতা নেই। এতে লোকসানের মুখে পড়েছি। একপোয়া চিকন পান বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে ১০০-২০০ টাকা। অথচ একপোয়া পান বরজ থেকে তুলতে খরচ হয় ২০০ টাকা।

হাকিমপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. মমতাজ সুলতানা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, করোনাকালীন বাজার না বসায় বরজ থেকে পান না উঠিয়ে বরজেই রেখে দিয়েছিলেন চাষিরা। এখন একসঙ্গে বরজ থেকে পান তোলায় দাম কমেছে। তবে খুব দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে। এই অঞ্চলে পান সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই। তবে চাষিদের দরকার হলে তারা গাছেই পানগুলো বেশি দিন রেখে সংরক্ষণ করতে পারেন।