বেড়েছে পাথরের দাম, কমেছে আমদানি

মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলমান বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে চাহিদা থাকায় দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পাথর আমদানি হচ্ছে। কিন্তু ভারতের অভ্যন্তরে সিরিয়ালসহ নানা জটিলতায় বন্দর দিয়ে পাথর রফতানি কমিয়ে দাম বাড়িয়েছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। চাহিদার তুলনায় আমদানি কম হওয়ায় দেশের বাজারে বেড়েছে পাথরের দাম। সেই সঙ্গে বিভিন্ন প্রকল্পে পাথর সরবরাহ করতে না পারায় বিপাকে পড়েছেন বন্দরের ব্যবসায়ীরা।

হিলি স্থলবন্দরে বর্তমানে আমদানিকৃত ৫-৮ ও ৩-৪ সাইজের পাথর প্রতিটন বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার ৭১০ টাকা থেকে তিন হাজার ৭৫০ টাকা। যা আগে তিন হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। হাফ ইঞ্চি সাইজের পাথর বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার ২৫০ টাকা। যা আগে ছিল তিন হাজার ২০০ টাকা।

হিলি স্থলবন্দরে পাথর কিনতে আসা নাজমুল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, রাস্তার কাজ চলছে। এ জন্য পাথর কিনতে এসেছি। কিন্তু আগের তুলনায় পাথরের দাম বেশি। টনপ্রতি দেড়শো টাকা বেড়েছে। আগে বন্দর দিয়ে প্রচুর পাথর আমদানি হওয়ায় দেখেশুনে কিনতে পারতাম। এখন কম আমদানি হওয়ায় মান ভালো না। সেইসঙ্গে গাড়ি ভাড়াও বেশি। এ জন্য পাথর কিনতে পারছি না।

হিলি স্থলবন্দরের পাথর আমদানিকারক আমিনুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, করোনার কারণে দেশের অনেক প্রকল্পের কাজ বন্ধ ছিল। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় আবারও কাজ শুরু হয়েছে। এ জন্য পাথরের চাহিদা বেড়েছে। চাহিদা বাড়ায় ভারতীয় ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে পাথরের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। পাশাপাশি কম পাথর রফতানি করছেন। যেসব প্রকল্পে পাথর সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলাম, দাম বাড়ায় সরবরাহ করতে পারছি না। চুক্তি অনুযায়ী পাথর সরবরাহ করতে না পারায় বকেয়া টাকা দিচ্ছেন না ক্রেতারা। 

তিনি আরও বলেন, দেশে যখন পাথরের চাহিদা বাড়ে ঠিক তখন সিন্ডিকেট করে বিভিন্ন অজুহাতে রফতানি কমিয়ে দাম বাড়িয়ে দেন ভারতের ব্যবসায়ীরা।

বিভিন্ন প্রকল্পে পাথর সরবরাহ করতে না পারায় বিপাকে পড়েছেন বন্দরের ব্যবসায়ীরা

পাথর আমদানিকারক ইদ্রিস আলী মিঠু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মূলত ভারতের অভ্যন্তরে সিরিয়াল নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে। পেঁয়াজসহ অন্যান্য ট্রাক পাঁচ-সাত হাজার টাকা দিয়ে সিরিয়াল নিয়ে দেশে আসছে। কিন্তু পাথরের ট্রাকে সেই টাকা না দেওয়ায় সিরিয়াল নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। ফলে বন্দর দিয়ে পাথর আমদানি কম হচ্ছে। আগে ১০০ ট্রাকের ওপরে পাথর আমদানি হতো। বর্তমানে ৪০-৫০ ট্রাক আমদানি হচ্ছে। ফলে দেশের বাজারে পাথরের দাম বেড়েছে। আমদানি বাড়লে দাম কমবে পাথরের।

হিলি স্থলবন্দর আমদানি রফতানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হারুন উর রশীদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও মেট্রোরেলসহ বিভিন্ন চলমান মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের জন্য পাথর আমদানি হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সড়ক ও মানুষের বাড়িঘর নির্মাণে পাথর ব্যবহার করায় চাহিদা বেড়েছে। ফলে প্রচুর পাথর আমদানি হচ্ছিল। কিছুদিন ধরে আমদানি কম হচ্ছে। কারণ ভারতের অভ্যন্তরে অন্যান্য পণ্যের কারণে পণ্যজটের সৃষ্টি হয়েছে। এ জন্য লোড-আনলোডে সমস্যা হচ্ছে। পাশাপাশি তাদের রাজনৈতিক সমস্যা রয়েছে। এটিও আমদানি কমার কারণ। আমদানি কম হলে দাম বেড়ে যায়।

হিলি স্থল শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা এসএম নুরুল আলম খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ, পাথর, গম, ভুট্টা, খৈল ও ভুসিসহ প্রতিদিন গড়ে ১৭০-২০০ ট্রাক বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি হয়। এর মধ্যে পাথরের ট্রাক আসে ৬০-৭০টির মতো। তবে এই সংখ্যা কয়েকদিন আগে আরও বেশি ছিল। এখন সেই সংখ্যা কমেছে।