স্বামী ও ছেলের নামে উপবৃত্তির টাকা তোলেন প্রধান শিক্ষক

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের গৌড়মহন হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্বামী ও ছেলেকে অভিভাবক সাজিয়ে নয় শিক্ষার্থীর নামে উপবৃত্তির টাকা তুলে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে ব্যবস্থা নিতে জেলা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এলাকাবাসী।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সালেহ সরকার অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করলেও এ বিষয়ে এখনও তদন্ত করা হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক লাইলি বেগম তার স্বামী জয়নাল আবেদিনকে প্রথম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর বাবা এবং প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির দুই শিক্ষার্থীর চাচা দেখিয়ে একই জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ব্যবহার করে একই মোবাইল ফোন নম্বরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা তুলেছেন। একইভাবে প্রধান শিক্ষক তার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে জাবিরকে প্রথম শ্রেণির ছয় শিক্ষার্থীর বাবা, ভাই ও চাচা সাজিয়ে টাকা উত্তোলন করছেন।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি প্রদান প্রকল্পের আওতায় গৌড়মহন হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির তালিকায় দেখা যায়, প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী হাবিবুর (রোল ২২) ও রাশেদা (রোল ২৮) এবং দ্বিতীয় শ্রেণির শাহাদতের (রোল ৪৯) অভিভাবকের স্থলে প্রধান শিক্ষকের স্বামী জয়নালের নাম ব্যবহার করা হয়েছে। আর প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী মুক্তা (রোল ৩৯), খাদিজা (রোল ৫৬), আরফিনা (রোল ৬৩), দিয়া (রোল ৬৪), সয়ামিনি (রোল ৬৫) এবং আশিকের (রোল ৬৪) অভিভাবক হিসেবে জাবিরের জাতীয় পরিচয়পত্র ও মোবাইল ফোন নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে।

এলাকাবাসী জানায়, তালিকায় থাকা শিক্ষার্থীদের অভিভাবক জয়নাল ও জাবির আসলে প্রধান শিক্ষক লাইলি বেগমের স্বামী ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে। আর যেসব শিক্ষার্থীর নাম ব্যবহার করে টাকা উত্তোলন করা হচ্ছে প্রকৃত পক্ষে সেসব নামে কোনও শিক্ষার্থী ওই স্কুলের সংশ্লিষ্ট শ্রেণিতে নেই।

উপবৃত্তির তালিকায় থাকা জয়নাল আবেদিনের মোবাইল ফোন নম্বরে কল করা হলে অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তি নিজের নাম জয়নাল আবেদিন এবং প্রধান শিক্ষক লাইলি বেগমের স্বামী বলে স্বীকার করেন।

শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা উত্তোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে জয়নাল বলেন, ‘দুই জন শিক্ষার্থীর মোবাইল ফোন নম্বরে কী যেন সমস্যার কারণে আমার নম্বর দিয়ে থাকতে পারে। আমি বিস্তারিত জানি না। কিন্তু আমার নম্বর দেওয়ার কথা না।’

তার ছেলের নাম জাবির নিশ্চিত করে জয়নাল বলেন, ‘তার (ছেলের) নাম ও মোবাইল ফোন নম্বর কেন ব্যবহার করা হয়েছে তা আমার জানা নেই। এ বিষয়ে ম্যাডাম (প্রধান শিক্ষক) বিস্তারিত বলতে পারবেন। আমি বাইরে আছি। বাসায় গিয়ে বিষয়টি জেনে আপনাকে জানাবো।’

স্বামী ও সন্তানকে অভিভাবক দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা উত্তোলনের কথা স্বীকার করেছেন প্রধান শিক্ষক লাইলি বেগম। তার দাবি, ওই নয় শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের মোবাইল ফোন নম্বর না থাকায় তিনি উপবৃত্তির তালিকায় তার স্বামী ও ছেলের নাম এবং মোবাইল ফোন নম্বর ব্যবহার করেছেন। উপবৃত্তির টাকা উত্তোলন করে ওই শিক্ষার্থীদের দিয়ে দেওয়া হয় বলেও দাবি করেন তিনি।

শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের স্থলে নিজের স্বামী ও ছেলের নাম ব্যবহার করা বিধিবহির্ভূত কিনা, জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘তা ঠিক। কিন্তু টাকা এলে ওই বাচ্চাদের দিয়ে দেওয়া হয়।’

ভুয়া নাম ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের টাকা উত্তোলন করছেন, এলাকাবাসীর এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বলেন,  ‘এ অভিযোগ সঠিক নয়।’

এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সালেহ সরকার বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। কিন্তু তা সঠিক কিনা তা এখনও যাচাই করা সম্ভব হয়নি। আমাদের তো অনেক কাজ। তাই এখনও তদন্ত করা হয়নি।’

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিইও) শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এখনও অভিযোগের কপি পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’