নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া তার নেশা, প্রচারণায় মাইকিং করছেন নিজেই

‘চেয়ারম্যান পদে আমাকে ভোট দিন, মোটরসাইকেল মার্কায় ভোট দিন। আমি নির্বাচিত হলে শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখবো, একটি মডেল ইউনিয়ন উপহার দেবো।’ এভাবেই নিজের নির্বাচনি প্রচারণা চালাচ্ছেন কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল হাই। 

মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী এই প্রার্থী একটি ব্যাটরিচালিত অটোরিকশার দুই দিকে দুটি মাইক নিয়ে মাইকিং করে নিজের নির্বাচনি প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

আগামী ৩১ জানুয়ারি ষষ্ঠ ধাপের ইউপি নির্বাচনে ভূরুঙ্গামারী উপজেলার তিনটি ও চিলমারী উপজেলার ৫টি ইউপিতে ইভিএমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ভূরুঙ্গামারী সদর ইউনিয়নে ছয় জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এদিকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে প্রচার-প্রচারণা। প্রার্থীরা কর্মী-সমর্থক ও রেকর্ডিং করে মাইক দিয়ে প্রচারণা চালালেও ব্যতিক্রমী প্রচারণা চালিয়ে আলোচনায় এসেছেন চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল হাই। পেশায় চর ভূরুঙ্গামারী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুল হাই নির্বাচন এলেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বলে এলাকায় তিনি ‘ভোট পাগল’ আব্দুল হাই মাস্টার নামে পরিচিত। এর আগে ২০০৩ সালে তিনি উপজেলার বঙ্গসোনাহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে ২০০৯ সালে ভূরুঙ্গামারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরবর্তী সময়ে ২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুড়িগ্রাম-১ আসনে জাকের পার্টি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। পরে ২০১৯ সালে আবারও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন। এবারের ইউপি নির্বাচনে সদর ইউনিয়ন থেকে তিনি আবারও চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

ভোটাররা বলছেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়া আব্দুল হাই মাস্টারের নেশা। নির্বাচন এলেই তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর আগে ইউপি ও উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে শহর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে তিনি নিজে ড্রেন ও সড়ক পরিচ্ছন্নতা কাজে অংশ নিয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন। এবার প্রচারণায় নিজে মাইকিং করে আবারও আলোচনায় এসেছেন।

জানা গেছে, এবারের ইউপি নির্বাচনে একটি অটোরিকশায় দাঁড়িয়ে তিনি নিজেই মাইকযোগে নির্বাচনি প্রচারণা চালাচ্ছেন। নির্বাচিত হলে জনগণকে বিভিন্ন সেবা দেওয়ার প্রতিশ্রতি দিচ্ছেন। তার ব্যতিক্রমী এই প্রচারণায় ইউনিয়নের ভোটারদের মাঝে ব্যাপক কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে। উৎসুক ভোটাররা রাস্তায় দাঁড়িয়ে মাইকিংয়ে তার দেওয়া প্রতিশ্রতি শুনছেন।

নিজেই প্রচারণা চালানোর বিষয়ে আব্দুল হাই মাস্টার বলেন, ‘জনগণকে উন্নয়নের প্রতিশ্রতি নিজের মুখেই দিতে চাই। নৈতকতা সম্পন্ন ইউনিয়ন বিনির্মাণে আমার প্রতিশ্রতিগুলো সরসরি জনগণকে অবহিত করতেই আমি নিজে মাইকিং করছি।’

বারবার কেন নির্বাচনে অংশ নেন এবং প্রচারণায় জনগণের কেমন সাড়া পাচ্ছেন, জানতে চাইলে আব্দুল হাই মাস্টার বলেন, ‘জনগণের পাশে থেকে জনগণের জন্য কাজ করার জন্যই বারবার নির্বাচনে অংশ নিই। ইতিবাচক সাড়াও পাচ্ছি। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ইনশাআল্লাহ জনগণ আমাকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবেন।’

নির্বাচিত হলে জনগণের জন্য কী করবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে এই প্রার্থী বলেন, ‘ভূরুঙ্গামারী সদর ইউনিয়নের মতো গুরত্বপূর্ণ  ইউনিয়নের উন্নয়নের জন্য সব চেষ্টা থাকবে। ভূরুঙ্গামারী হাটের উন্নয়নসহ নদীভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেবো। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সুবিধা পেতে জনগণকে যেন কোনও হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হতে না হয় সেটা নিশ্চিত করবো। ভূরুঙ্গামারী ইউনিয়নকে একটি জনবান্ধব মডেল ইউনিয়নে পরিণত করবো। ’

ইভিএমে ভোট হওয়ার বিষয়ে এই প্রার্থী বলেন, ‘জনগণ ইভিএম মেশিনে ভোট দেওয়া নিয়ে কিছুটা দ্বিধা ও ভয়ে থাকলেও আমি এই পদ্ধতিতে আস্থাশীল। আশা করছি নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হবে।’