ভাষার মাসে পঞ্চগড়ে হচ্ছে ২১টি সেলুন পাঠাগার

এখন থেকে সেলুনে পাওয়া যাবে বই। চুল কাটাতে সেলুনে এলেই এখন থেকে বই পড়তে পারবেন গ্রাহকরা। ভিড় বেশি হলে গ্রাহকরা বিরক্ত হয়ে ফিরে যেতেন। এখন থেকে আর বিরক্ত হতে হবে না। বই পড়েই সময় কাটাতে পারবেন। ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে এসব পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করা হবে।

‘পড়িলে বই আলোকিত হই, না পড়িলে বই অন্ধকারে রই’ স্লোগানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে পঞ্চগড়ের ২১টি সেলুনে পাঠাগার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জেলা শহরের সেলুনগুলোতে এসব পাঠাগার গড়ে তোলার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম স্মৃতি পাঠাগার। ওই পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা মকবুলার রহমান সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সম্মান তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আল আমিন। জ্ঞানভিত্তিক জাতি গঠনে উন্নত সমাজ বিনির্মাণ ও বইয়ের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করাই এই সেলুন পাঠাগার স্থাপনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য বলে জানান আল আমিন।

এরই মধ্যে জেলা শহরের চৌধুরী মার্কেটের নিচতলার নিউ পারসন এক্সক্লুসিভ জেন্টস পারলারে সেলুন পাঠাগার উদ্বোধন করা হয়। মকবুলার রহমান সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ এম দেলওয়ার হোসেন প্রধান এই সেলুন পাঠাগার উদ্বোধন করেন। এ সময় অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক হাসনুর রশিদ বাবু, ব্যাংক এশিয়া পঞ্চগড় শাখার ম্যানেজার আব্দুল হামিদসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। পাঠাগার স্থাপনের পর শহরের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ সেলুনে প্রতিদিন ভিড় করছেন।

তরুণ উদ্যোক্তা আল আমিন বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে জেলা শহরের ২১টি সেলুনে পাঠাগার গড়ে তোলার কাজ শুরু করেছি। ইতোমধ্যে একটিতে স্থাপন করা হয়েছে। অন্যান্য সেলুন মালিকের সঙ্গে কথা হয়েছে। পাঠাগারে দেওয়ার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বই সংগ্রহ করা হচ্ছে। বেশিরভাগ তরুণ শিক্ষার্থী সেলুনে এসে অপেক্ষার সময়টুকু স্মার্টফোনে গেম খেলে কাটিয়ে দেন। অনেকে বিরক্ত হন। গ্রাহকরা সেলুনে এসে যেন বিরক্ত না হন, সিরিয়াল পেতে অপেক্ষার সময়টা যেন বই পড়ে কাটাতে পারেন এজন্যই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সম্পূর্ণ বই পড়ে ফেলতে না পারলেও বইয়ের নামগুলো জানবেন। লেখকের নাম জানবেন। ইচ্ছা থাকলে পরে তারা বইটি সংগ্রহ করে পড়ে ফেলতে পারবেন। 

তিনি আরও বলেন, ব্যক্তিগত টাকা থেকে বুকসেলফ বানানোর মজুরি দিয়েছি। কাউকে মিনি বুকসেলফ বানিয়ে দিয়েছি। আবার কোনও কোনও সেলুন মালিক নিজেই সবকিছু করবেন বলে কথা দিয়েছেন। তবে যারা আগ্রহী হবেন তাদেরই শুধু সেলুন পাঠাগার নির্মাণ করে দেওয়া হবে।

সেলুন পাঠাগারে কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু, শিশুতোষ, ইতিহাস ঐতিহ্য পর্যটনের ওপর লেখা দেশি ও স্থানীয় লেখকদের ৪০টি করে বই সরবরাহ করা হবে। সরকারি-বেসরকারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে সহযোগিতা পেলে পুরো জেলায় এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন এই উদ্যোক্তা।

নিউ পারসন এক্সক্লুসিভ জেন্টস পারলার সেলুনের পরিচালক মো. আলমগীর হোসেন বলেন, সেলুনে একটি মিনি পাঠাগার স্থাপন করার আগ্রহ জানিয়ে আল আমিন ভাই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আমি সেলুনের ভেতরে বুকসেলফ বানিয়ে নিয়েছি। তিনি আমাকে মজুরির টাকা দিয়েছেন। এটি ভালো উদ্যোগ। অনেকেই বই পড়ছেন।

সাইফুল ইসলাম নামে এক গ্রাহক বলেন, আমি নিয়মিত এই সেলুনের একজন গ্রাহক। চুল কাটাতে এসে দেখলাম সেলুনে পাঠাগার স্থাপন করা হয়েছে। দেখে অভিভূত আমি। এখন থেকে আর মোবাইল অযথা সময় নষ্ট না করে বই পড়ে সময় কাটাতে পারবো। অনেকগুলো বই দেখলাম, আমার খুব ভালো লাগলো।

অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক হাসনুর রশিদ বাবু বলেন, বই মানুষকে আনন্দ দেয়, মানুষকে উৎসাহিত করে। সেই অর্থে এটি নতুন ধারণা। চুল কাটাতে এসে মানুষের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস তৈরি হবে। সেলুন পাঠাগার স্থাপনে যে তরুণ উদ্যোগ নিয়েছেন তাকে সাধুবাদ জানাই।

পঞ্চগড় মকবুলার রহমান সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. দেলওয়ার হোসেন প্রধান বলেন, আজকের এই যুগে কমবেশি সবাই ফেসবুকে সময় কাটাই। ফেস বাদ দিয়ে বুকের দিকে একটু অগ্রসর হলে সবার চিন্তা-চেতনা জাগ্রত হবে। আল আমিনের এই উদ্যোগ এখানকার মানুষের মধ্যে বই পড়ার আনন্দ কিছুটা হলেও জাগ্রত করবে। তার চিন্তার সফলতার মধ্য দিয়ে প্রকৃত মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন কিছু মানুষ তৈরি হবে।


আরও পড়ুন:

রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি ভবন পরিত্যক্ত, অধিকাংশ অংশ দখল

ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে টিকে আছে যশোর ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরি

বগুড়ার উডবার্ণ সরকারি গণগ্রন্থাগারে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া