ভাষার টানে শূন্যরেখায় দুই বাংলার মিলনমেলা

দিনাজপুরের হিলি সীমান্তে গতবারের মতো এবারও করোনার কারণে সীমিত পরিসরে যৌথভাবে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করেছে দুই বাংলা। করোনা পরিস্থিতি কেটে গেলে আগামীতে বড় পরিসরে দিবসটি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন আয়োজকরা।

সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় হিলি সীমান্তের চেকপোস্ট গেটের ২৮৫ নম্বর মেইন পিলারের ১১ নম্বর সাব-পিলার সংলগ্ন শূন্যরেখায় দিবসটি পালন করা হয়। বিজিবি ও বিএসএফের উপস্থিতিতে দুই দেশের আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে অস্থায়ী বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। ভারতের উজ্জীবন সোসাইটি, উত্তরের রোববার, জয়েন্ট মুভমেন্ট কমিটি ফর করিডর ও বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, হাকিমপুর পৌরসভা ও সাপ্তাহিক আলোকিত সীমান্ত পত্রিকার যৌথ আয়োজনে দিবসটি পালন করা হয়। এ সময় দুই দেশের শিল্পীরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন কবিতা ও গান পরিবেশন করেন। পরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য তুলে বক্তব্য রাখেন বক্তারা।

এদিকে, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শ্রদ্ধা জানাতে ও আয়োজিত অনুষ্ঠান দেখতে সীমান্তের দুই পাড়ে মানুষজন ভিড় করেন। তবে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী তাদেরকে শূন্যরেখায় ভিড়তে দেননি। যার কারণে তাদের মনে আক্ষেপ রয়ে গেছে।

সেখানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের পক্ষে হাকিমপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শাহিনুর রেজা, পৌর মেয়র জামিল হোসেন, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার লিয়াকত আলী, মুক্তিযোদ্ধা শামসুল ইসলাম, সাপ্তাহিক আলোকিত সীমান্তের সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহরাব হোসেন ও ভারতের পক্ষে বালুরঘাট পৌরসভার সাবেক মেয়র হরিপদসাহা, জয়েন্ট মুভমেন্ট ফর করিডরের আহ্বায়ক নবকুমার দাশ, বিজিবির হিলি আইসিপি ক্যাম্প কমান্ডার সুবেদার ইয়াসিন আলী ও বিএসএফের হিলি ক্যাম্প কমান্ডার পরিদর্শক ভারত ভুষণ।

বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এপার বাংলা ওপার বাংলা- দুই বাংলার ভাষা এক সংস্কৃতিও এক। সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে দুই দেশের মানুষের মাঝে ব্যবধান তৈরি করলেও ভাষার বন্ধন অটুট রাখতে উভয়ের মধ্যে শুভেচ্ছা বিনিময় ও পুষ্পস্তবক বিনিময় করেছি। এই লক্ষ্যে আমরা এপার বাংলা ওপার বাংলা এক হয়ে মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সীমান্তের শূন্যরেখায় জড়ো হয়েছিলাম।

হাকিমপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শাহিনুর রেজা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,  আমরা দুই বাংলার মানুষ একই ভাষাভাষির মানুষ। দুই দেশের এই বাংলা ভাষাভাষি মানুষের সংস্কৃতিও এক। ভাষাভাষি মানুষদের ভালোবাসা অবিচ্ছেদ থাকার কারণে আবারও এক হয়েছি।

ভারতের উজ্জীবন সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক সুরুজ দাশ বলেন, বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। এই মহান ভাষার ঐতিহ্য সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ুক। এই বার্তা দেওয়ার জন্যই আমাদের এই প্রয়াস।

সাপ্তাহিক আলোকিত সীমান্ত পত্রিকার সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে হিলি সীমান্তের শূন্যরেখায় অস্থায়ী বেদিতে দুই বাংলার বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও মানুষজন ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছি। ২০১৫ সাল থেকে সীমান্তের শূন্যরেখায় ব্যাপক পরিসরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করে আসছিলাম। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে গতবার থেকে সীমিত পরিসরে এটি পালন করছি। আগামীতে বড় পরিসরে করার চেষ্টা থাকবে।