রংপুরে পরিবহন ধর্মঘট নিয়ে দিনভর নাটক, যাত্রীদের দুর্ভোগ  

রংপুর থেকে ঢাকাগামী বাস চলাচল বন্ধ নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) সকাল থেকে পরিবহন শ্রমিকদের একটি পক্ষ বাসের চালক ও সহকারীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের বেতন বাড়ানোর দাবিতে ধর্মঘট পালন করছে। অন্যদিকে অপরপক্ষ বলছে ধর্মঘট পালন হচ্ছে না। দিনভর এই বিভ্রান্তি ও ধর্মঘট নাটকের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন ঢাকাগামী সাধারণ যাত্রীরা। শুধু তাই নয় জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আর মোটর মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য নিয়েও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সকাল থেকে সড়কে তিনটি প্রতিষ্ঠানের বাস চলাচল করলেও অন্য বাস চলছে না। তবে এসবের কারণে ভোগান্তি বেড়েছে সাধারণ যাত্রীদের। সকাল থেকে ঢাকাগামী যাত্রীদের  ধর্মঘটের নামে হয়রানি করার অভিযোগও উঠেছে।

সরেজমিন রংপুর নগরীর কামারপাড়া এলাকায় অবস্থিত ঢাকা বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা গেছে, সকাল ৯টা পর্যন্ত ঢাকাগামী বাস চলাচল বন্ধ ছিল। আগমনী বাস কাউন্টারে গেলে কর্তব্যরত কর্মচারী আশরাফ জানান, শ্রমিক নেতারা বাস চালাতে নিষেধ করেছেন। 

এদিকে এনা, ফতেহ আলী ও শ্যামলী পরিবহনের বাস সড়কে চালাচল করেছে। সকাল থেকেই তিন পরিবহনের বাসগুলো যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। 

শ্যামলী পরিবহন কাউন্টারের কর্মী সাফিউল ইসলাম বলেন, আমাদের মালিকপক্ষ বাস চালু রাখতে বলেছেন। সকাল থেকেই নির্ধারিত সময়ে বাস ছেড়েছে। ধর্মঘটের কোনও খবর আমাদের জানা নেই।

একইভাবে বাস মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এনায়েতুর রহমানের মালিকানাধীন এনা পরিবহনের সব বাসও ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা অব্যাহত রেখেছে। একই অবস্থা ফতেহ আলী পরিবহনের।

এদিকে মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ বলেন, আমরা কোনও ধর্মঘট আহবান করিনি।

তবে রংপুর জেলা মোটর মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফতাবুজ্জামান নিপ্পন বলেন,  কয়েকদিন আগে মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ বলেছিলেন বাসের ড্রাইভার ও হেলপারসহ কর্মচারীদের বেতন না বাড়লে তারা ধর্মঘটে যাবেন। এ ঘটনার পর বাস মালিকরা ড্রাইভার ও হেলপারদের বেতন বাড়িয়েছেন। এ বিষয়টি অন্যদের সঙ্গে আব্দুল মজিদের শেয়ার করা দরকার ছিল। তাহলে সমস্যা হতো না।

এস আর ট্রাভেলসের টিকিট কাউন্টারের কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সোমবার রাতে মোটর শ্রমিকদের কয়েকজন নেতা বলেছেন- মঙ্গলবার বাস চলাচল বন্ধ থাকবে। তারা এখন পর্যন্ত বলছে না বাস চালাচল শুরু হবে কিনা। এ কারণে আমরা বিপাকে পড়েছি। একই কথা বললেন হানিফ পরিবহনসহ অন্যান্য কোম্পানির কাউন্টারে কর্মরত কর্মচারীরা।

তিনটি কোম্পানির গাড়ি ছাড়া অন্য কোম্পানির যারা আগাম টিকেট কিনেছেন এ রকম অনেক যাত্রী এসে ঘুরে গেছেন। 

সাবিহা খাতুন নামে এক যাত্রী ঢাকায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তিনি বলেন, কিছু বাস চলছে, আর কিছু চলছে না। তারা যাত্রীদের নিয়ে খেলা শুরু করেছেন। প্রশাসন কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না। অথচ কাল বুধবার চাকরিতে যোগ দিতেই হবে। 

একই কথা বললেন গার্মেন্টস কর্মী আশরাফ। তিনি বলেন, মায়ের অসুস্থতার খবরে ছুটি নিয়ে এসেছিলাম। তবে বাস বন্ধ থাকায় যেতে পারছি না।

কামার পাড়া বাসস্ট্যান্ডে কর্মরত পুলিশের এক এসআই নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য এসেছি, বাস চলবে কিনা সেটা জানি না।