মেডিক্যালে ভর্তির টাকা পেলেন রিফাত, বললেন মানবিক চিকিৎসক হবেন 

ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তা কাটলো দারিদ্র্যকে জয় করে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজে সুযোগ পাওয়া রিফাত ইসলামের। এই মেধাবী শিক্ষার্থীর ভর্তির টাকা দিয়েছে জি এম এস গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ। ভর্তির টাকা পেয়ে মানবিক চিকিৎসক হয়ে দরিদ্রদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন রিফাত। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সব প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে মেডিক্যালে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন রিফাত। কিন্তু দারিদ্র্যের সঙ্গে সংগ্রাম করে এতদূর এগিয়ে আসার পরও অর্থ-সংকটে মেডিক্যালে ভর্তি হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। ১০ এপ্রিল ‘দারিদ্র্য জয় করে মেডিক্যালে চান্স পেয়েও ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তায় রিফাত’ শিরোনামে বাংলা ট্রিবিউনে সংবাদ প্রকাশ হয়। সংবাদ প্রকাশের পর ভর্তির জন্য তাকে ২৫ হাজার টাকা সহায়তা দেয় জি এম এস গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ।

বুধবার (২০ এপ্রিল) বিকাল সোয়া ৪টায় হিলির মাঠপাড়া গ্রামের বাড়িতে গিয়ে রিফাতের হাতে ২৫ হাজার টাকা তুলে দেন বাংলা ট্রিবিউনের হিলি প্রতিনিধি হালিম আল রাজী। এ সময় তার মা লাভলী বেগম উপস্থিত ছিলেন। 

ভর্তির টাকা পেয়ে রিফাত ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাকে পড়াশোনা করানোর মতো আর্থিক অবস্থা ভালো নেই পরিবারের। ছোটবেলা থেকেই খুব কষ্ট করে বন্ধুদের কাছ থেকে বই সংগ্রহ করে ও শিক্ষকদের সহযোগিতায় স্কুল ও কলেজে পড়ালেখা চালিয়ে এ পর্যন্ত এসেছি। শিক্ষক ও বাবা-মায়ের দোয়ায় মেডিক্যালে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু মেডিক্যালে ভর্তির তো অনেক খরচ। অনেক টাকা লাগবে। তারপর সেখানে পড়ার খরচ চালানো নিয়ে আমি ও পরিবার দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই। যিনি আমাকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছেন তার প্রতি কৃতজ্ঞ। আজীবন মনে থাকবে আমার। এই সহযোগিতার ফলে আমি ও আমার পরিবারের দুশ্চিন্তা কেটে গেলো। আগামী ৮ মে থেকে ১২ মে পর্যন্ত ভর্তির সুযোগ দিয়েছে মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ। ৭ মে মেডিক্যালে ভর্তির জন্য হিলি থেকে কুমিল্লার উদ্দেশে রওনা হবো। ৮ মে আমি মেডিক্যালে ভর্তি হবো।’

বাংলা ট্রিবিউনের অফিসে অনুদানের অর্থ পৌঁছে দেন সাবিনা সাবি  

আরও পড়ুন: দারিদ্র্য জয় করে মেডিক্যালে চান্স পেয়েও ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তায় রিফাত

তিনি বলেন, ‘আমি সবার কাছে দোয়া চাই; যাতে পড়ালেখা শেষ করে একজন মানবিক চিকিৎসক হতে পারি। একই সঙ্গে দরিদ্র মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিতে চাই।’

রিফাতের মা লাভলী বেগম বলেন, ‘ছেলে অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করেছে। আমার ছেলে মেডিক্যালে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে এটি মা হিসেবে আমার খুব ভালো লাগার বিষয়। যিনি ছেলের ভর্তির টাকা দিয়েছেন তার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।’

উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন গ্রাম মাঠপাড়ায় বসবাস রিফাতের পরিবারের। দুই ভাইয়ের মধ্যে রিফাত বড়। ছোট ভাই ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। বাবা আমিন ইসলামের রয়েছে ছোট্ট মুদি দোকান। তাই ছোট থেকেই অভাব-অনটনের মধ্যে বেড়ে ওঠা রিফাতের। এ কারণে ভালো কোনও স্কুলে পড়ার সুযোগ ছিল না তার। শিশু শ্রেণিতে তিনি লেখাপড়া করেছেন গ্রামের ব্র্যাক স্কুলে। এরপর বাসুদেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পিএসসিতে জিপিএ-৫ ও সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পান। একই স্কুল থেকে অষ্টম শ্রেণিতে জিপিএ-৫-সহ ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়ে ভর্তি হন বাংলাহিলি পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজে। ২০১৮ সালে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করে ভর্তি হন স্থানীয় হাকিমপুর সরকারি কলেজে। ২০২১ সালে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন রিফাত। অভাবের কারণে প্রাইভেট পড়ার সুযোগ হয়নি তার।