আবারও ‘অচেনা’ প্রাণীর আক্রমণ, শিশু-নারীসহ আহত ৪০

‘অচেনা’ প্রাণীর আক্রমণে আতঙ্ক ভর করেছে গাইবান্ধা পৌর শহরের কলেজপাড়ার বাসিন্দাদের মধ্যে। ওই প্রাণীর আক্রমণে আহত হয়েছেন শিশু ও নারীসহ অন্তত ৪০ জন। আহত সবাই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। শুক্রবার (২৭ মে) ভোর ৬টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত পৌর শহরের কলেজপাড়া এলাকায় আক্রমণ চালায় প্রাণীটি। তাৎক্ষণিক আহতদের উদ্ধার করে গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তারা বাড়ি ফিরেছেন। 

আহতরা জানান, শুক্রবার ভোরে কলেজপাড়া জামে মসজিদ এলাকায় হঠাৎ করে অচেনা এক প্রাণী আশপাশে থাকা লোকজনসহ পথচারীর ওপর আক্রমণ চালায়। এ সময় প্রাণীটির আক্রমণে শিশু, নারী, মুসল্লি, শিক্ষক, রিকশাচালক ও জেলেসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অন্তত ৪০ জন আহত হন।  

আহতদের ভাষ্যমতে, প্রাণীটি দেখতে কিছুটা কুকুর আকৃতির। গায়ের রং সাদা-লাল। শরীরে এক ধরনের ডোরাকাটা দাগ রয়েছে। লেজ আকারে বড় ও মোটা বলে জানিয়েছেন আহতরা।

কয়েক গ্রামে ‘অচেনা’ প্রাণীর আতঙ্ক: নিহত ১, আহত ১০

স্থানীয়রা বলছেন, শহরে কলেজপাড়া, গোড়স্থান মোড়, স্টেডিয়াম ও রেল লাইন এলাকায় আগে থেকেই কুকুর ও শিয়ালের উপদ্রুব ছিল। মাঝে মধ্যেই এসব প্রাণী হিংস্র আচরণ করে। এরই মধ্যে শুক্রবার সকালে হঠাৎ করে কুকুর আকৃতির একটি প্রাণী কয়েক দফায় স্থানীয় লোকজনের ওপর আক্রমণ করে।  

আহত অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আবদুল মজিদ বলেন, সকালে হাঁটতে বাসা থেকে বের হই। বাসার অদূরে যেতেই হিংস্র প্রাণীটি আক্রমণ করে বসে। প্রাণীটি বাম পায়ের হাঁটুর নিচে পরপর কয়েকটি কামড় বসায়। এতে জখম হয়ে প্রচুর রক্ষক্ষরণ হয়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরেছি।

প্রাণীর আক্রমণের শিকার কলেজপাড়ার বাসিন্দা শম্ভু জানান, সকালে বাসার সামনে ফাঁকা মাঠে যেতেই অচেনা প্রাণীটি আক্রমণ চালায়। প্রাণীটির আক্রমণে বাম পায়ে জখম হয়েছে। প্রাণীটি কুকুর না শেয়াল তা বুঝতে পারিনি।

‘অচেনা’ প্রাণীটি শনাক্ত করতে পারেননি বন কর্মকর্তারা

এদিকে, অচেনা প্রাণীর আক্রমণের ঘটনার পর কলেজপাড়া ছাড়াও আতঙ্ক ছড়িয়েছে প্রফেসর কলোনি, গোড়স্থান মোড়, পুলিশ লাইন্স ও আদর্শপাড়া এলাকায়। বর্তমানে স্থানীয়রা ঘর থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছেন। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না।

গাইবান্ধা সদর হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডা. শর্মিষ্ঠা রানী বর্মণ বলেন, ‌সকাল ৭টা থেকে ১১টা পর্যন্ত প্রাণীটির আক্রমণে আহত হয়ে একজন শিশুসহ কমপক্ষে ৪০ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের জলাতঙ্ক ভ্যাকসিনসহ প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। 

আহতদের ভাষ্য ও তাদের শরীরের ক্ষত দেখে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, হিংস্র প্রকৃতির কুকুর এই আক্রমণ চালিয়েছে।

গাইবান্ধা পৌর মেয়র মতলুবর রহমান বলেন, হঠাৎ অচেনা প্রাণীর আক্রমণে পৌরসভার কলেজপাড়া এলাকার বেশ কয়েকজন বাসিন্দা আহত হওয়ার খবর শুনেছি। তবে এটি পাগলা কুকুর হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কুকুরটিকে শনাক্তের চেষ্টা চলছে। আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া ছাড়াও জলাতঙ্ক ভ্যাকসিন নিশ্চিত করা হয়েছে বলে জানান তিনি। 

এরআগে, গত বছরের অক্টোবরে গাইবান্ধার পলাশবাড়ি উপজেলার কয়েকটি গ্রামে আচেনা প্রাণীর উপদ্রুব দেখা দেয়। সেই প্রাণীটির আক্রমণে মসজিদের এক ইমাম নিহতসহ আহত হন ৩০ জন।