৭ মাস ধরে মর্গে পড়ে আছে ভারতীয় নাগরিকের লাশ

রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের লাশঘরে প্রবীর মন্ডল (৪১) নামে ভারতীয় এক নাগরিকের লাশ সাত মাসের বেশি সময় ধরে পড়ে আছে। ভারত লাশটি নেওয়ার কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে, হাসপাতালে অব্যাহত বিদ্যুৎবিভ্রাটের কারণে লাশ নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

হাসপাতালের লাশ ঘরের দায়িত্বে থাকা সরদার আব্দুর রাজ্জাক জানান, গত বছরের ৯ নভেম্বর লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম থানার এসআই রমজান আলী ও কনস্টেবল আব্দুল জলিল প্রবীর মন্ডলের লাশটি হাসপাতালে নিয়ে আসেন। তার বাড়ি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলার নিমচা মৈত্রী স্ট্রিট এম আলম বাজার এলাকায়। বাবার নাম পিতা মহাদেব মন্ডল। লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্নের লাশ ঘরে রেখে যায় পুলিশ।

এ বিষয়ে পাটগ্রাম থানার এসআই রমজান আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ভারতীয় নাগরিকের লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিক্যাল কলেজের মর্গে নিয়ে যাই। সেখানে ময়নাতদন্ত হওয়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে লাশঘরে রেখে আসি। তার স্বজনদের ঠিকানায় খবর দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তারা কেউই যোগাযোগ করেনি।’

তিনি বলেন, ‘ভারতীয় দূতাবাসের মাধ্যমেই যোগাযোগ করতে হবে। অন্যদিকে দীর্ঘ সাত মাসেও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন রংপুর মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগ থেকে পাওয়া যায়নি।’

এই বিষয়ে জানতে পাটগ্রাম থানার ওসি ওমর ফারুকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘প্রবীর মন্ডল ২০১৮ সালের ১৬ মার্চ ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশে আসেন। এরপর থেকে তিনি ঢাকাতেই অবস্থান করে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা করতেন। ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও তিনি ভারতে গিয়ে বাংলাদেশে অবৈধভাবে বসবাস করছিলেন। পরে পাটগ্রাম উপজেলার ব্যাংক কান্দা গ্রামের এক তরুণীর সঙ্গে বোনের সম্পর্ক গড়ে তুলে তাদের বাসায় অবস্থান করছিলেন। গত বছরের ৮ নভেম্বর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই রাতেই মারা যান। খবর পেয়ে পাটগ্রাম থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিক্যাল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়।’

তিনি বলেন, ‘ময়নাতদন্ত শেষে লাশ যেহেতু লালমনিরহাটে সংরক্ষণের কোনও ব্যবস্থা নেই, সে কারণে ওই হাসপাতালের লাশঘরে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে রেখে আসা হয়। পুরো বিষয়টি ভারতীয় দূতাবাসকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। এ ছাড়া মৃত ভারতীয় নাগরিকের বাড়ির ঠিকানায়ও খবর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ভারতীয় দূতাবাস কিংবা তার স্বজনরা কেউই যোগাযোগ করেনি। তবে লাশ হস্তান্তর প্রক্রিয়াধীন আছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে ওসি আরও বলেন, ‘যাদের বাসায় ভারতীয় নাগরিক অবৈধভাবে ছিল- সেই মেয়েকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে তার অভিভাবকদের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। রংপুর মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগ থেকে এখনও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। তাই মৃত্যুর কারণও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’

এ বিষয়ে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. রেজাউল করিম বলেন, ‘হাসপাতালের লাশঘরে অনুমতি নিয়ে লাশ রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে লাশ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া সম্পর্কে কিছুই জানি না।’