গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগ, ৬ দিনেও মামলা নেননি ওসি

কুড়িগ্রামের উলিপুরের তবকপুর ইউনিয়নে এক গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। গত ১৩ জুন রাতে এ ঘটনা ঘটে। ছয় দিন পেরিয়ে গেলেও শনিবার (১৮ জুন) সন্ধ্যা পর্যন্ত মামলা নেয়নি পুলিশ। 

ভুক্তভোগী গৃহবধূ ও তার স্বামীর অভিযোগ, ঘটনার পরদিনই তারা থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। কিন্তু মামলা নিতে ‘টালবাহানা’ করছেন উলিপুর থানার ওসি ইমতিয়াজ কবির।

তবে ওসি ইমতিয়াজ কবিরের দাবি, ‘ওই দিন রাতে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু লিখিত কোনও অভিযোগ পাইনি।’

আইনজীবীরা বলছেন, ধর্ষণের মতো গুরুতর অভিযোগে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পরও মামলা রেকর্ড না হওয়া আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। অথচ পুলিশের কাছে পেশকৃত সব মামলা প্রথম দৃষ্টিতে মিথ্যা বা সত্য, গুরুতর কিংবা সাধারণ দণ্ডবিধির অধীনে শাস্তিযোগ্য, যাই হোক না কেন তার এফআইআর গ্রহণ করার বিধান রয়েছে। মামলা রেকর্ড না করে পুলিশ রেগুলেশনস ভঙ্গ করেছেন ওসি।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ১৩ জুন রাত সাড়ে ১১টার দিকে তবকপুর ইউনিয়নের মোল্লাপাড়ার বাসিন্দা আওলাদ হোসেন (৩০) নামে এক যুবক ওই গৃহবধূর ভাড়া বাড়িতে ঢুুকে তাকে ধর্ষণ করে। এ সময় তার চিৎকারে স্বামী এগিয়ে এলে আওলাদ গৃহবধূর স্বামীকে মারধর করে আহত করে। পরে লোহার পাইপ দিয়ে গৃহবধূকেও মারধর করে। 

তাদের চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে আওলাদ পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা ওই গৃহবধূ ও তার স্বামীকে উলিপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসার চেষ্টা করা হয় বলেও অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন ভুক্তভোগী গৃহবধূ।

গৃহবধূর স্বামী জানান, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তার শ্বশুরের মাধ্যমে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন স্ত্রী। কিন্তু ঘটনার ছয় দিন পেরিয়ে গেলেও মামলা নথিভুক্ত করেনি পুলিশ।

গৃহবধূর স্বামী বলেন, ‘তিন-চার দিন ধইরা শুধু থানায় হাঁটতাছি। লিখিত অভিযোগ নিয়ে ওসি দারোগা পাঠাইছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত মামলা নেয় নাই। আজ (শনিবার) সন্ধ্যায় আবার থানায় ডাকছেন ওসি।’

আওলাদ হোসেন ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ লোক জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘সে চেয়ারম্যানের ক্যাডার। চেয়ারম্যান তার পক্ষ নিয়া কাজ করতাছে। মনে হয় সে জন্য মামলাও নেয় নাই পুলিশ।’

ভুক্তভোগী গৃহবধূ বলেন, ‘আওলাদ আমাকে ধর্ষণ করেছে। আমাকে আর স্বামীকে মারধর করেছে। আমার বাবার হাত দিয়া (বাবার মাধ্যমে) থানায় লিখিত অভিযোগ করছি। কিন্তু পুলিশ মামলা নেয় নাই। আমি বিচার চাই।’

অভিযুক্ত আওলাদের বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তার মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে।

আওলাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তবকপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘ইউনিয়নের সবাই আমার ঘনিষ্ঠ। আমার কোনও পক্ষ-বিপক্ষ নাই। কে কী করছে, না করছে তা আমার জানা নাই।’

এক প্রশ্নের জবাবে এই ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি জনপ্রতিনিধি। আমি কোনও ক্যাডার পুষি না। এ ঘটনায় আমার কোনও সম্পৃক্ততা নেই।’

লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পরও মামলা রেকর্ড না করে ওসি আইন লঙ্ঘন করেছেন বলে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সাবেক বিচারক আজিজুর রহমান দুলু। 

তিনি বলেন, ‘এই মামলা না নেওয়া একটি ফৌজদারী অপরাধ। ১৮৬১ সালের পুলিশ আইনের ২৯ ধারা অনুযায়ী যার শাস্তি তিন মাসের কারাদণ্ড অথবা তিন মাসের বেতন জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড।’

এ ব্যাপারে ওসি ইমতিয়াজ কবির বলেন, ‘ঘটনার খবর পাওয়ার পর পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। গৃহবধূর পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ বা এজাহার পাইনি।’

তবে অভিযুক্ত আওলাদের বিষয়ে খোঁজখবর রেখেছেন ওসি। ওসি বলেন, ‘যার বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই আওলাদ ডেডলি ইনজুরি নিয়ে রংপুর মেডিক্যাল হাসপাতালে ভর্তি। তার হাতে ও কানে, মানে ক্রিটিক্যাল ইনজুরি আরকি। এখন ও (আওলাদ) কী জন্য গিয়েছিল ওখানে (গৃহবধূর বাড়িতে), এ বিষয়ে তারা লিখিত কোনও এজাহার দেয়নি এখনও।’

ওসির এমন দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী গৃহবধূর বাবা বলেন, ‘আমি নিজে মেয়ের লিখিত অভিযোগ নিয়ে থানায় গেছি। ওসিকে জমা দিছি। এরপর দুই-তিন দিন থানায় গেছি। কিন্তু মামলা হয় নাই।’