দুশ্চিন্তায় রংপুরের খামারিরা

ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে রংপুরের বিভিন্ন হাটে পশু আসা শুরু হয়েছে। এরইমধ্যে রাজধানী ঢাকা ও বন্দর নগরী চট্টগ্রামের পাইকাররাও হাটে ভিড় জমিয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রংপুরে এবার কোরবানির জন্য রেকর্ড পরিমাণ পশু রয়েছে। খামারিদের কাছে জেলার চাহিদা মেটানোর পরেও এক লাখ ৩২ হাজারের বেশি পশু থাকবে। তবে গো-খাদ্যের দাম তিনগুণের বেশি বাড়ায় খরচ অনুযায়ী ভালো দাম পাবেন কিনা তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন খামারিরা। খামারিরা বলছেন, যে গরুর দাম দুই লাখ টাকা, পাইকাররা তার দাম এক লাখও বলছেন না।

রংপুরের প্রাণিসম্পদ বিভাগ জানায়, চলতি বছর কোরবানির জন্য রংপুর জেলার ২৫ হাজার ৭১ জন খামারির কাছে রেকর্ড পরিমাণ তিন লাখ ৫৩ হাজার ৬১০টি পশু রয়েছে। জেলার জন্য চাহিদা রয়েছে দুই লাখ ১৬ হাজার ৩৭০ পশু। এতে উদ্বৃত্ত থাকবে প্রায় এক লাখ ৩২ হাজার ৩১৫টি। এ অবস্থায় খামারিরা বলছেন, দেশের বাইরে থেকে পশু আমদানির কোনও প্রয়োজন হবে না। বরং রংপুরের চাহিদা মিটিয়ে এক লাখ ৩২ হাজার পশু দেশের অন্য জেলায় পাঠানো সম্ভব হবে। 

তবে খামারিরা বলছেন, গো-খাদ্যের দাম গত বছরের চেয়ে তিনগুণ বেড়েছে। এ অবস্থায় তাদের অনেক খরচ হচ্ছে। সে অনুযায়ী দাম পাবেন কিনা তা নিয়ে তারা শঙ্কায় রয়েছেন। এতে করে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে তারা যে পশু পালন করছেন, সে খরচ উঠবে কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন খামারিরা। 

সরেজমিন রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার জায়গিরহাট গ্রামে ঘুরে দেখা যায়, সেখানে দুইশ’র বেশি গরুর খামার রয়েছে। প্রতিটি খামারে ২৫ থেকে একশ’ করে গরু-ছাগল রয়েছে। খামারের সব পশুই কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। 

খামারি বাতেন মিয়া বলেন, আমার খামারে ৩৫টি দেশি জাতের গরু রয়েছে। গড়ে এক থেকে দেড় লাখ টাকা দাম হওয়ার কথা। কিন্তু গো-খাদ্যের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় কেমন দাম পাবো তা নিয়ে চিন্তা হচ্ছে। গরুর দাম যেভাবে আশা করা হয়েছিল তা পাওয়ার সম্ভাবনা কম। 

একই কথা জানালেন বৈরীগঞ্জ এলাকার খামারি মমতাজুর রহমান। তিনি বলেন, গরু মোটাতাজা এবং পুষ্ট করতে ভুসি , খৈল, চালের গুঁড়াসহ নানা খাদ্যের প্রয়োজন। একটা গরুর পেছনে কমপক্ষে গড়ে প্রতিদিন পাঁচশ’ টাকা করে ব্যয় হয়। এবার গো-খাদ্যের দাম অনেক বেশি। তাই পশুপালনে খরচও অনেক বেশি হয়েছে। সে অনুযায়ী দাম পাওয়ার আশা কম। 

অন্যদিকে রংপুর নগরীর মাহিগঞ্জ এলাকায় প্রায় এক হাজার গরুর খামার রয়েছে। খামারিরা জানান, রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে পাইকাররা আসছেন কোরবানির পশু নিতে। তবে তারা যে গরুর দাম দুই লাখ টাকা, তার দাম এক লাখও বলছেন না।

খামারিরা জানান, রংপুরে অনেক শিক্ষিত তরুণ গরুর খামার গড়ে তুলেছেন। এতে খামারের সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। তারা কোরবানির ঈদ উপলক্ষ করে গরু-ছাগলকে প্রস্তুত করেছেন। এসব পশু বিক্রি করে যে আয় হবে তা দিয়ে সারা বছর চলার ব্যবস্থা হবে তাদের। তবে এবার অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে গো-খাদ্যের দাম বাড়ায় খরচ বাদ দিয়ে লাভের মুখ দেখার সম্ভাবনা কম। 

সার্বিক বিষয়ে রংপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রেয়াজুল ইসলাম বলেন, খামারিরা এবার রেকর্ড পরিমাণ পশু প্রতিপালন করেছেন। যা জেলার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ অন্যান্য জেলার চাহিদা পূরণ করতে পারবে।  তবে পশুখাদ্যের দাম এবার একটু বেশি। এতে খামারিদের লাভ কমে যাবে। তবে তাদের লোকসান হবে না বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।