২১০ টাকার হাসিল ৮০০ টাকা

নীলফামারীর ডোমার উপজেলার খাটুরিয়া বসুনিয়ার হাটে হাসিল আদায়ের নামে চাঁদাবাজি চলছে। গরু-ছাগলসহ বিভিন্ন পণ্য বেচাকেনায় সরকার নির্ধারিত মূল্যের দ্বিগুণ টাকা আদায় করছেন ইজারাদার। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী হাটে হাসিল আদায়ের তালিকা টানানো বাধ্যতামূলক হলেও এখানে তা টানানো হয়নি।

স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রতিটি গরু বিক্রি করতে গেলে সরকার নির্ধারিত হাসিল দিতে হয় ২১০ টাকা। সেখানে আদায় করা হচ্ছে ৮০০ টাকা। এর মধ্যে বিক্রেতা ২০০ ও ক্রেতাকে ৬০০ টাকা দিতে হচ্ছে। একইভাবে প্রতিটি ছাগলে ৪৫ টাকার জায়গায় ২০০ টাকা। এর মধ্যে ক্রেতা ১৫০ ও বিক্রেতাকে ৫০ টাকা দিতে হয়। পাশাপাশি বাইসাইকেল ৪৫ টাকার জায়গায় ২০০ টাকা। এখানেও বিক্রেতাকে দিতে হয় ৫০ ও ক্রেতা ১৫০ টাকা। তবে গরু-ছাগলের হাসিল আদায়ের রশিদে টাকার পরিমাণ উল্লেখ করা হয় না।

হাটে গরু বিক্রি করতে আসা নীলফামারী সদরের রামনগর ইউনিয়নের বিশমুড়ি গ্রামের আনসার আলী বলেন, ‘হাটে একটি গরু বিক্রি করলে ক্রেতা-বিক্রেতা দুই জনের কাছ থেকেই টাকা নেন ইজারাদার। প্রতি গরুতে ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত। এর আগেও এই হাটে গরু বিক্রি করেছি, তখন এ রকম ছিল না।’

পঞ্চগড় জেলার দেবিগঞ্জ সদরের ফজলুর রহমান বলেন, ‘অন্যান্য হাটের চেয়ে এ হাটে হাসিলের পরিমাণ অনেক বেশি। গতবারের চেয়ে এবার ইজারাদার হাসিলের টাকা বাড়িয়েছেন। এত টাকা নেওয়ার তো কথা না। আমরা সরকারি রেট জানি না।’

একই হাটের ক্রেতা ও পাইকারি ব্যবসায়ী নুরনবী মিয়া বলেন, ‘হাটে হাসিল বেশি হওয়ায় ৩৫টি গরু কেনার কথা থাকলে মাত্র কিনেছি ২৯টি। বেশি গরু কিনে লোকসান দিতে হবে। হাটে সরকারি হাসিলের তালিকা টানানোর কথা থাকলেও সেটি নেই। ফলে কেউ বুঝতে পারছেন না হাসিলের পরিমাণ কত।’

ওই হাটের হাসিল লেখক খাটুরিয়া ধনিপাড়ার ওয়াজেদ আলী ও মোরছালিন মিয়া বলেন, ‘ইজারাদার যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন আমরা সেভাবেই কাজ করি।’ 

আদায়কৃত হাসিলের পরিমাণ রশিদে লিখছেন না কেন জানতে চাইলে জবাবে তারা বলেন, 'সেটি লেখা নিষেধ আছে।’

এ ব্যাপারে হাটের ইজারাদার মাহমুদুল হাসান বসুনিয়া বলেন, ‘এক বছরের জন্য তিন কোটি ৭৪ লাখ টাকায় হাটটি ইজারা নিয়েছি। লোকসান তুলে নিতে গরু, ছাগল ও বাইসাইকেল ক্রয়-বিক্রয়ে হাসিল বেশি নেওয়া হচ্ছে। যতটুকু নেওয়া হচ্ছে, সেখান থেকে আবার মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির, বিবাহসহ নানা ধরনের অনুষ্ঠানে চাঁদা দিতে হয়। আবার প্রশাসনিক ঝামেলা তো আছেই। তারপরও অন্যান্য হাটের তুলনায় আমরা কম নিচ্ছি।

সোনারায় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম ফিরোজ বলেন, ‘বসুনিয়ার হাটে ৮০০ টাকা হাসিল আদায় করা হচ্ছে। ইজারাদারকে সরকারি মূল্য অনুযায়ী হাসিল আদায় করতে বললেও আমার কথা শোনেনি।’

ডোমার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রমিজ আলম বলেন, ‘এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। যারা অতিরিক্ত হাসিল আদায় করছে, তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘দুই জন ইউপি সদস্য অতিরিক্ত হাসিল আদায়ের লিখিত অভিযোগ করেছেন। এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’