দা-বঁটিতে চলছে শান, ঈদ পেরোলেই সুনসান

দিন পেরোলেই কোরবানির ঈদ। নতুন দা, বঁটি, ছুরিসহ পুরনোগুলোতেও শেষ মুহূর্তের শান দিতে ব্যস্ত নীলফামারীর কামাররা।

জেলার ছয় উপজেলার প্রতিটি বাজারেই অনবরত চলছে ঝনঝনানি। সরগম পুরনো সেই কামারশালা। কয়লার উত্তাপে ঘেমে একাকার কামাররাও।

সরেজমিন দেখা গেলো, নীলফামারীর সৈয়দপুরের ওয়াপদার মোড়ের কারখানাগুলোতে চাপাতি, দা, বঁটি, চাকুতে শেষ ফিনিশিং দিচ্ছেন কামাররা। পুরনো ছুরি-কাচিতে চলছে শান দেওয়া।

তবে এ চিত্র শুধু ঈদুল আজহার সময়টাতেই। বছরের বাকি সময় কামারদের কাজ থাকে না বললেই চলে। তাই এই পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাওয়ার কথা ভাবছেন অনেকেই।

প্রতিটি বাজারেই অনবরত চলছে ঝনঝনানি

সত্যেন কর্মকার জানালেন, প্রতিবছর ঈদের মৌসুমে কামার ও শ্রমিকদের ব্যবসা ভালো। তবে আগে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় যে কয়লা পাওয়া যেতো, সেটার দাম এখন ৯০-১০০ টাকা।

জেলার আমতলী এলাকার কারিগর পুলিন চন্দ্র রায় জানান, প্রতিবছর ঈদের মৌসুমে কেনাবেচার ধুম পড়ে। এই আয়ের টাকায় সংসারের খোরাক জোটে অনেকটা।

‘এবারের ঈদে গড়ে প্রতিদিন খরচ বাদে এক থেকে দেড় হাজার টাকা আয় করছি।’  

পুলিন চন্দ্রের কাছ থেকে আরও জানা গেলো, একটি বড় দা বানাতে পাঁচ কেজি লোহা লাগে। মজুরিসহ খরচ পড়ে সাতশ’ টাকা। চাপাতির দাম প্রকারভেদে চার থেকে পাঁচশ টাকা। বড় ছোরার দাম ওজন ভেদে ৩০০ থেকে সাড়ে ৪০০ টাকা।

এলাকার যতীন কর্মকার বললেন, ‘চাহিদার কথা মাথায় রেখে কিছু জিনিসপত্র আগেই বানিয়ে রাখি।’

এবার কোরবানিদাতা ও নিউ বাবুপাড়ার বাসিন্দা আব্দুল মালেক বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার ছুরি-কাঁচির দাম বেশি। লোহার দাম বেড়ে যাওয়ায় নাকি এসবের দাম বেড়েছে।

ছুরি-কাঁচিতে চলছে শাণ দেওয়া

অপরদিকে, মাংস বানানোর জন্য তেঁতুল ও বট গাছের খাইটার চাহিদাও বেড়েছে। স্থানীয় করাত কলগুলোতে কাঠের গুঁড়ি কিনতে অনেকেই ভিড় করেছেন। ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায় মিলছে এসব খাইটা।

নীলফামারী শহরের ডালপট্টি এলাকার কামার শশী মোহন্ত বলেন, ‘এই পেশা আমার বাপ দাদার। ৩৫ বছর ধরে নিজেও কাজ করছি। এখন অনেক যন্ত্রপাতি বের হয়েছে বলে কামার শিল্পের কদর কমেছে। তবে এলাকায় কোরবানির ঈদ এলে দা, বঁটির কাজ পাই। এরপর আর হাতে কাজ থাকে না।

নীলফামারী চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি প্রকৌশলী এসএম শফিকুল আলম ডাবলু জানান, এটি প্রাচীন শিল্প। এখনও এটা অনেকে ধরে রেখেছেন। এ শিল্পের প্রধান উপকরণ হলো লোহা, ইস্পাত ও কয়লা। বর্তমানে এসবের দাম বেড়ে যাওয়ায় মালিকরাও অর্থ সংকটে পড়েছেন।