ঈদ জামাতের জন্য প্রস্তুত উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় ময়দান

দিনাজপুরের গোর-এ শহীদ ময়দানে গত ঈদুল ফিতরে ছয় লক্ষাধিক মুসল্লি একসঙ্গে জামাতে অংশগ্রহণ করেন। এবারও প্রায় ছয় লাখ মুসল্লির জন্য একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায়ে প্রস্তুত করা হয়েছে উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ এই ঈদগাহ ময়দান।

মাঠ প্রস্তুতি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরাপত্তার বিষয়টি দেখতে শুক্রবার (৮ জুলাই) বিকালে ঈদগাহ মিনার ও মাঠ পরিদর্শন করেছেন ঈদগাহ মাঠের উদ্যোক্তা ও পরিকল্পনাকারী জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সচিন চাকমা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোমিনুল করিম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আছলাম উদ্দীন, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুজন সরকার, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মর্তুজা আল মুঈদ প্রমুখ।

পরিদর্শন শেষে ইকবালুর রহিম বলেন, ‌‘গোর-এ শহীদ বড় ময়দানে এশিয়ার সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে, যাতে মুসল্লিরা সুষ্ঠুভাবে ঈদের নামাজ আদায় করতে পারেন। এখানে যে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়, সেখানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অনেকেই অংশ নেন। গত ঈদুল ফিতরেও অংশ নিয়েছিলেন এবং ঈদুল আজহার জামাতেও অংশ নেবেন বলে আশা করছি।’

প্রায় ছয় লাখ মুসল্লি এই ঈদগাহে নামাজ আদায় করবেন

পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ঈদের জামাতকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত থাকবে। পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবকও থাকবে। মোট পাঁচটি স্তরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত থাকবে। আশা করছি মুসল্লিরা শান্তিপূর্ণভাবে জামাতে অংশ গ্রহণ করতে পারবেন।’

পুলিশ জানিয়েছে, এই মাঠে পুলিশের পাশাপাশি আনসার, র‍্যাব, বিজিবি, এনএসআই, ডিজিএফআই, ডিএসবিসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা মোতায়েন থাকবেন। প্রায় এক হাজার পোশাকধারী ও অস্ত্রধারী পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবেন। মাঠে থাকবে সিসি ক্যামেরা ও ওয়াচ টাওয়ার। এসব থেকে সার্বক্ষণিক পুরো মাঠ পর্যবেক্ষণ করা হবে। বেশ কয়েক দিন থেকেই শহর ও শহরের আশপাশের সিসি ক্যামেরাগুলো পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। মুসল্লিদের তল্লাশি করে মাঠে প্রবেশ করানো হবে।

মাঠের প্রস্তুতিসহ সৌন্দর্য দেখতে ভারতের মুম্বাই থেকে চাচার বাড়িতে এসেছেন মোহাম্মদ আশিক। উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় ঈদগাহ মাঠে জামাতে অংশগ্রহণ করার ইচ্ছা তার।

আশিক বলেন, ‘আমার বাংলাদেশে অনেক আত্মীয় আছে। এরমধ্যে একজন চাচাও রয়েছেন। তার বাড়িতেই আমি এসেছি। এখানে এসে শুনি, এশিয়ার সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। তারপর আর বাড়ি ফিরে যেতে ইচ্ছা করেনি। তাই থেকে গেলাম। এখানেই ঈদের নামাজ আদায় করবো। আমি কেবল কল্পনা করছি, মুসল্লিরা যখন দাঁড়াবেন তখন দৃশ্যটা কত সুন্দর দেখাবে।’

মুসল্লিদের তল্লাশি করে মাঠে প্রবেশ করানো হবে

দিনাজপুর শহরের সুইহারী এলাকার হাসিনুর চৌধুরী বলেন, ‘এবার করোনা বেড়ে যাচ্ছিল দেশে। একটা আশঙ্কা ছিল, এবারও বুঝি বন্ধ হয়। কিন্তু যখন দেখলাম মাঠ প্রস্তুতি চলছে তখন অনেক ভালো লাগতে শুরু করে।’

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গোর-এ শহীদ বড় ময়দানের আয়তন প্রায় ২২ একর। ২০১৭ সালে নির্মিত ৫২ গম্বুজের ঈদগাহ মিনার তৈরিতে খরচ হয়েছে তিন কোটি ৮০ লাখ টাকা।  ঈদগাহ মাঠটি ঐতিহাসিক নিদর্শন ও মনোরম কৃতির সৌন্দর্য ও নান্দনিক হিসেবে নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। এই ৫০ গম্বুজের দুই ধারে ৬০ ফুট করে ২টি মিনার, মাঝের দুটি মিনার ৫০ ফুট করে। ঈদগাহ মাঠের মিনারের প্রথম গম্বুজ অর্থাৎ মেহেরাব (যেখানে ইমাম দাঁড়াবেন) তার উচ্চতা ৪৭ ফিট। এর সাথে রয়েছে আরও ৪৯টি গম্বুজ। 

এছাড়া ৫১৬ ফিট লম্বায় ৩২টি আর্চ নির্মাণ করা হয়েছে। উপমহাদেশে এত বড় ঈদগাহ মাঠ দ্বিতীয়টি নেই। পুরো মিনার সিরামিক্স দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি গম্বুজ ও মিনারে রয়েছে বৈদ্যুতিক লাইটিং। রাত হলে ঈদগাহ মিনার আলোকিত হয়ে উঠে। ২০১৭ সাল থেকেই প্রতিবারে এখানে ঈদের নামাজ আদায় করছেন দিনাজপুর জেলাসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা-উপজেলার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। তবে করোনার প্রকোপের ফলে গত দুই বছরে এই মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি। করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ায় চলতি বছরে ঈদুল ফিতরে নামাজ আদায় হয়েছে।