নীলফামারীতে কাঁচা মরিচের কেজি ১৮০ টাকা

সরবরাহ কমের অজুহাতে একদিনের ব্যবধানে নীলফামারী জেলা শহরের কিচেন মার্কেটে দেশি কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে কেজিতে ৩০ টাকা। শুক্রবার (২২ জুলাই) সকালে বাজার ঘুরে দেখা যায়, ১৮০ টাকা কেজি দরে দেশি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে। 

এর আগে বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) দেশি কাঁচা মরিচ পাইকারি বাজারে ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল। শুক্রবারও একই দামে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু খুচরা বাজারে ১৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। কেজিতে ৩০ টাকা লাভ করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।

কিচেন মার্কেটের খুচরা ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক (৫৫) বলেন, কিছুদিন আগে বৃষ্টির কারণে মরিচের গাছ মরে যাওয়ায় বাজারে সরবরাহ কমেছে। 

১৮০ টাকা কেজি বিক্রির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো সদরের টুপামারী ইউনিয়নের শীতার পাঠ গ্রামের মরিচ। সকালে গাছ থেকে ছিঁড়ে ১০টার মধ্যে বাজারে দিয়ে যান কৃষকরা। তাজা হিসেবে মানুষ কিনছেও প্রচুর। তাই দাম বেশি। তবে আমদানিকৃত পুরাতন মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৬০ টাকায়।

ওই মার্কেটের পাইকারি ব্যবসায়ী শেখ কামাল আহমেদ (৩৫) বলেন, প্রকারভেদে বাজারে কাঁচা মরিচের দাম উঠানামা করছে। আমদানিকৃত মরিচের কেজি পাইকারিতে ৯৫-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ওই মরিচেই খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৬০ টাকায়। 

দামের এত পার্থক্যের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাঁচা মালের ঘাটতি হয়, তারপর বাসি হলে কেজিতে ২৫০ গ্রাম কমে যায়। এছাড়া অতি গরমে পচে যায়। তাই লোকসান ঠেকাতে বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। তবে দেশি মরিচ ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর কারণ সরবরাহ কম। 

এদিকে, দেশি কাঁচা মরিচ একই বাজারে পাইকারি প্রতি কেজি ১৫০ টাকায় কিনে তা খুচরা বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে ১৮০ টাকায়। প্রতি কেজিতে খুচরা ব্যবসায়ীরা লাভ করছেন ৩০ টাকা।

কাঁচা মরিচের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন নিম্নআয়ের মানুষজন। এ অবস্থায় ভারত থেকে মরিচ আমদানির কথা বলেছেন খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা।

সকালে নীলফামারী কিচেন মার্কেটে কাঁচা মরিচ ও পেঁয়াজ কিনতে আসা ভ্যানচালক হবিবর রহমান (৪৪) বলেন, সাত দিন আগে ৯০ টাকা কেজি দরে কাঁচা মরিচ কিনছিলাম। সাত দিনের ব্যবধানে আজ ১৮০ টাকা কেজি কিনতে হচ্ছে। ভ্যান চালিয়ে যা রোজগার হয় তা দিয়ে ঠিকমতো বাজার করতে পারি না।

হবিবর বলেন, বর্তমানে এক কেজি চাল ৫০ টাকা, অথচ এককেজি কাঁচা মরিচ ১৮০ টাকা। এককেজি মরিচের দাম দিয়ে সাড়ে তিন কেজি চাল কেনা যাবে। 

জেলা শহরের নিউ বাবুপাড়ার কৃষিশ্রমিক মজিদুল ইসলাম বলেন, একদিনের ব্যবধানে কাঁচা মরিচের দাম কেজিতে ৩০ টাকা বেড়েছে। এতে আমাদের বিপাকে পড়তে হয়েছে। আমদানি কম অজুহাতে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এসব দেখার যেন কেউ নেই।

জেলা শহরের কিচেন মার্কেটের কাঁচামালের আড়তদার আব্দুল হাকিম বলেন, মোকামে আমদানি কম কাঁচা মরিচের। যে টুকু পাওয়া যাচ্ছে তা বস্তায় গরমে পচে যাচ্ছে। যেসব এলাকায় মরিচ উৎপাদন বেশি হয়, সেসব এলাকায় বৃষ্টিপাত ও বন্যার কারণে মরিচের সরবরাহ কমেছে। আগে পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা প্রতি মণ বিক্রি হলেও বর্তমানে পাঁচ হাজার ৯০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এ জন্য আমাদের বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে আমদানি স্বাভাবিক হলে দাম কম যাবে।

জেলা হাটবাজার মনিটরিং কর্মকর্তা এ টি এম এরশাদ আলম খান বলেন, বাজারে কেউ যাতে কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে না পারে, সে জন্য আমরা নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছি। মরিচ, পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। কারও বিরুদ্ধে অতিরিক্ত দাম নেওয়ার অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন নাহার বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বাজার ব্যবস্থাকে অস্থির করে তুলেছে। অতিরিক্ত মুনাফা ভোক্তাদের কাছ থেকে  হাতিয়ে নিচ্ছে। উপজেলা প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।